পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুষ্কোশ হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া আর গলা শুকাইয়া যাওয়ার কারণ যে মনের কোন দুর্বলতা নয়, মালতী তা ধারণাও করিতে পারিবে না, বিশ্বাসও করিবে না । মালতীর কাছে সে উদারতা প্ৰত্যাশাও করা চলে না। আহত-বিস্ময়ে কত কি যে মালতী ভাবিবে! ক্ষোভ, দুঃখ, ঈৰ্ষা ও ক্ৰোধে আরও কত আঘাত যে নিজের জন্য নিজেই সে চয়ন করিবে ! তবে, হয়তো মালতী জানিবে না । না জানার সম্ভাবনাই বেশী । রিনি যদি রাগ করে, চিরদিনের জন্য যদি তার সঙ্গে সম্পর্ক চুকাইয়া দেয়, কারো কাছে সে কোনদিন বলিতে পারিবে না, ছদ্মবেশী এক বুনো জানোয়ারের কোন দাবী একদিন তাকে প্রত্যাখ্যান করিতে হইয়াছিল। মালতী জানিবে না। তবু রাজকুমার অস্বস্তি বোধ করিতে থাকে। স্তরে স্তরে সঞ্চিত সংস্কারের অবাধ্য প্ৰতিবাদ একটানা চাপের মত মনে অশান্তি জাগাইয়া রাখে। মালতীর না জানা তো বড় কথা নয় ! মালতীর জানার ফলাফলটা সে যতখানি কল্পনা করিতে পারে তারই গুরুত্ব যেন সকলের আগে বিবেচ্য। জানুক, বা না জানুক, আঘাত পাক বা না পাক, যে কাজ করিলে একটি মেয়ের সুখ-শান্তি ধ্বংস হইয়া যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সে কাজ করা তার উচিত নয়। মনে তার পাপ নাই ? না থাক । পুণ্যের জন্যও অনেক কাজ সংসারে করা যায় না । রিনির সঙ্গে গুরুতর বুঝাপড়ার লড়াই শুরু করিবার ঠিক আগে এসব চিন্তা রাজকুমারকে একটু কাবু করিয়াছিল বৈ কি। কালও যা করা চলিবে আজ তা না করিয়া পালানোর কথাটাও একবার তার মনে আসিল। ভাবিয়া চিন্তিয়া দেখিবার জন্য আরেকটু সময় নিলে কি আসিয়া যায় ? হঠাৎ যেন একটু ভয় করিতে লাগিল রাজকুমারের। ভাবনা তার ছিল অনেক, এতক্ষণ ভয় একটু ছিল না। —সময় যদি লাগে, তাহলে তুমি বোসে। নেয়ে এসে তোমার দরকারী কথা শুনিব ।