পাতা:চতুষ্কোণ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চক্ষুকোণ t মালতী হাসিল, লোকে কি ভাববে, তুমি আবার তা ভাবে নাকি ? পরের বাড়ির মেয়ের হাত ধরতে যাও কেন তবে ? -এই জন্যে।--বলিয়া রাজকুমার মালতীর হাত মুঠায় চাপিয়া ধরিয়া ছাড়িয়া দিল । বিয়ে বাড়ীতে সময়টা কাটিল ভালই। বন্ধু ও পরিচিত অনেকে উপস্থিত ছিল। রাত দশটার মধ্যে লগ্ন, বসিয়া বসিয়া অনেকক্ষণ রাজকুমার বিবাহ দেখিল। কনেকে সত্যই আশ্চর্য রকম সুন্দরী দেখাইতেছে । রঙ তার অত্যন্ত ফরসা, সাধারণ অবস্থায় দিনের বেলা লাবণ্যের অভাবে চোখে ভাল লাগে না, এখন ক্ৰীম, পাউডার, মো, চন্দন আর ঘামে স্নিগ্ধ ও কোমল হইয়াছে মুখখানা। খুতগুলি চাপা পড়িয়া গিয়াছে সাজানোর কায়দায় এবং খুতও মেয়েটির কম নয়। রাজকুমার অনাবশ্যক সহানুভূতিবোধ করে। সাধারণ দৈনন্দিন জীবনে এভাবে সাজিয়া থাকিবার সুযোগ মেয়েটি পাইবে না । দু’পাশে চাপ কপাল, নিভাঁজ চোখের কোণ, নাকের নীচে ভিতর দিকে মুখের অসমতল খাদ, চোয়ালের অসামঞ্জস্য, এ সব লোকের চোখে পড়িতে থাকিবে। তবে, ধীরেনের চোখে হয়তো পড়িবে না । ফরসা রঙে তার চোখে যে ধাঁধা লাগিয়াছে, সেটা আর কাটিবার নয়। বাড়ির বৌ-এর রঙের গর্বে বাড়ির অন্য মানুষেরাও হয়তো তার রূপের অন্য সব ক্রটির কথা তেমন ভাবে মনে রাখিবে না। মেয়েটি একটু বোকা এবং অহঙ্কারী। মুখ দেখিয়া এটুকু বুঝা যায়। কাপড়ে পুটুলি করা দেহটি দেখিয়া অনুমান করা যায়, ভোতা অনাড়ম্বর, নিস্ক্রিয় প্রেমের সে উপযোগী । নীরবে অনেকটা নিজীবি পুতুলের মত নিজেকে দান করার জন্য সে চব্বিশ ঘণ্টা প্ৰস্তুত হইয়া থাকিবে ; ধীরেনের যখন খুশী গ্ৰহণ করিবে যখন খুশী করিবে না, তার দিক হইতে কখনো কোন দাবি আসিবে না, কোন সাড়া পাওয়া যাইবে না। স্বামীর সঙ্গে অন্তরালের জীবনটিও প্রথম হইতেই তার কাছে