পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চমৎকুমারী

কুটিল ভঙ্গীতে তাঁর দিকে তাকাচ্ছে। মোষের রাখাল একটি ন-দশ বছরের ছেলে। সে হাত নেড়ে চেঁচিয়ে কি বলল বোঝা গেল না। মনোলোভা ভয় পেয়ে দৌড়ে নদীর ধারে এলেন এবং কোনও রকমে পার হলেন, কিন্তু ওপারে উঠেই একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেন, পারলেন না, পায়ের চেটোয় অত্যন্ত বেদনা।

 চারিদিক জনশূন্য, সেই রাখাল ছেলেটাও অদৃশ্য হয়েছে। অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। আতঙ্কে মনোলোভার বুদ্ধিলোপ হল। হঠাৎ তাঁর কানে এল—

 —একি, পড়ে গেলেন নাকি?

 লম্বা লম্বা পা ফেলে যিনি এগিয়ে এলেন তিনি একজন ব্যুঢ়োরস্ক বৃষস্কন্ধ পুরুষ, পরনে ইজার, হাঁটু পর্যন্ত আচকান, তার উপর একটা নকশাদার শালের ফতুয়া, মাথায় লোমশ ভেড়ার চামড়ার আস্ত্রাকান টুপি।

 মনোলোভার দুই হাত ধরে টানতে টানতে আগন্তুক বললেন, হেঁইও, উঠে পড়ুন। পারছেন না? খুব লেগেছে? দেখি কোথায় লাগল।

 হাত পা গুটিয়ে নিয়ে মনোলোভা বললেন, ও আর দেখবেন কি, পা মচকে গেছে, দাঁড়াবার শক্তি নেই। আপনি দয়া করে যদি একটা পালকি টালকি যোগাড় করে দেন তো বড়ই উপকার হয়।

 —খেপেছেন, এখানে পালকি তাঞ্জাম চতুর্দোলা কিছুই মিলবে না, স্ট্রেচারও নয়। আপনি কোথায় থাকেন? গণেশমুণ্ডায় লালকুঠিতে? আপনারাই বুঝি আজ সকালে পৌঁছেছেন? আমি আপনার পায়ে একটু মাসাজ করে দিচ্ছি, তাতে ব্যথা কমবে। তার পর আমার হাতে ভর দিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে বাড়ি ফিরতে