করেছিলেন, কিন্তু আমার মন তোমাকেই আঁকড়ে ছিল। তোমার বিয়ে যখন অন্যের সঙ্গে হল তখন অত্যন্ত ঘা খেয়েছিলুম, দেহ মন প্রাণ যেন কেউ পিষে ফেলেছিল। পরে অবশ্য একটু একটু করে সামলে উঠেছিলুম, তোমাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলুম। কিন্তু বিয়ের ইচ্ছে আর হয় নি।
—কোনও মেয়ের সঙ্গে মেলামেশা কর নি?
—তোমার কাছে মিথ্যা বলব না। আমি শুকদেব বা রামকৃষ্ণ পরমহংস নই, পতন হয়েছিল, কিন্তু অল্প কালের জন্যে। একদিন স্বপ্ন দেখলাম, তোমার মৃতদেহ যেন আমি পা দিয়ে মাড়িয়ে চলছি। আর্তনাদ করে জেগে উঠলাম, ধিক্কারে মন ভরে গেল। হিন্দুর মেয়ে ছেলেবেলা থেকে সতীত্বের সংস্কার পায়, তাই তারা সহজেই শুচি থাকে। কিন্তু পুরুষেরা কোনও শিক্ষা পায় না। মেয়েদের বলা হয় সীতা সাবিত্রী হৈমবতীর মতন সতী হও, কিন্তু পুরুষদের কেউ বলে না-রামচন্দ্রের মতন একনিষ্ঠ হও।
—কি নিয়ে এত কাল কাটালে?
—চাকরি, রোগীর চিকিৎসা, অজস্র বই পড়া, আর ঘুরে বেড়ানো। তোমার স্মৃতি ক্রমশ মুছে গেলেও যেন মনে ছেঁকা দিয়ে স্টেরাইল করে দিয়েছিল, সেখানে আর কেউ স্থান পায় নি। ওকি, কাঁদছ নাকি? বড় বড় দুঃখের ভোগ তো তোমার চুকে গেছে, এখন আমার তুচ্ছ কথায় কাতর হচ্ছ কেন? শোন যশো, তোমাকে অনিচ্ছায় বিয়ে করতে হয়েছিল, আর আমি এখনও কুমার আছি, এর জন্যে নিজেকে ছোট ভেবো না। তোমার বয়স ছিল মোটে পনরো, এখনকার হিসেবে প্রায় খুকী। তুমি আমাকে খুব ভাল বাসতে তা ঠিক, কিন্তু বাল্যকালের সে ভালবাসা হচ্ছে কাফ লভ, ছেলেমানুষী ব্যাপার, তা চিরস্থায়ী হতে পারে না।