ভর্তি হলুম, তার পর বিলাত গেলুম। কাল পঞ্চাশ বছর পরে আবার ওঁর সঙ্গে দেখা হল। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলুম, কিন্তু দেখে হঠাৎ মনের মধ্যে একটা তোলপাড় উঠল, যাকে বলে অলোড়ন, বিক্ষোভ, আকুলিবিকুলি।
ধ্রুব বলল, অবাক করলেন দাদু। বুড়ীকে হঠাৎ দেখে বুড়োর ওল্ড ফ্লেম দপ করে জ্বলে উঠল, আগেকার প্রেম উথলে উঠল?
—ঠিক আগেকার প্রেম নয়, অন্য রকম আশ্চর্য অনুভূতি। তোমাদের তা উপলব্ধি করবার বয়স হয় নি। যথাসম্ভব বুঝিয়ে দিচ্ছি শোন। নিশ্চয়ই জান, তোমাদের এই ঠাকুমা অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন।
রাকা বলল, আমার চাইতেও?
—মাই ডিয়ার ইয়ং লেডি, তুমি সুন্দরী বট, কিন্তু তোমার সেকালের দিদিশাশুড়ীর তুলনায় তুমি একটি পেঁচী। যদি দৈবক্রমে ওঁর সঙ্গে আমার বিয়ে হত তা হলে গত পঞ্চান্ন বছরে আমার চোখের সামনেই উনি ক্রমশ বুড়ী হতেন। ধাপে ধাপে নয়, একটানা ক্রমিক পরিবর্তন, কিশোরী থেকে যুবতী, তার পর মধ্যবয়স্কা প্রৌঢ়া, তার পর বৃদ্ধা। সবই সইয়ে সইয়ে তিল তিল করে ঘটত, আমার আশ্চর্য হবার কোনও কারণ থাকত না। কবে উনি মোটাতে শুরু করলেন, কবে চশমা নিলেন, কবে দাঁত পড়ল, কবে চুলে পাক ধরল, প্রেমালাপ ঘুচে গিয়ে কবে সাংসারিক নীরস বিষয় একমাত্র আলোচ্য হয়ে উঠল, এ সব অমি লক্ষ্যই করতুম না। বৃক্ষলতার যৌবন বার বার ফিরে আসে, কিন্তু মানুষের ভাগ্যে তেমন হয় না, বাল্য যৌবন জরা আমাদের অবশ্যম্ভাবী, তার জন্যে আমরা প্রস্তুত থাকি। কিন্তু সেকালের সেই পরমা সুন্দরী কিশোরী যশো, আর পঞ্চান্ন বৎসর পরে যাকে দেখলুম