পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জয়রাম-জয়ন্তী

য়রাম নন্দী কোনও অসাধারণ মহাপুরুষ নন, তিনি শুধু অসাধারণ দীর্ঘজীবী। আজ তাঁর শততম জন্মদিন, তাই তাঁর আত্মীয়রা একটু জয়ন্তীর আয়োজন করেছেন। পোলাও আর মাংস রান্না হচ্ছে, কিন্তু এ বাড়িতে নয়, একটু দূরে অন্য বাড়িতে, নয়তো বুড়ো গন্ধ পেয়ে খাবার জন্যে আবদার করবে।

 সকালে কমলানেবুর রস আর দুধ-সন্দেশ খাইয়ে বাইরের ঘরে একটা তক্তপোশে অনেকগুলো বালিশে ঠেস দিয়ে জয়রামকে বসানো হয়েছে। আজ রবিবার, সকলেরই ফুরসত আছে। স্বজনবর্গ একে একে এসে প্রণাম করছে, উপহার দিচ্ছে, দু-চারটে কথা বলে অনেকে চলে যাচ্ছে, কেউ বা অল্পক্ষণের জন্যে বসছে।

 বয়সের তুলনায় জয়রামের শরীর ভালই আছে। ব্লডপ্রেশার বেশী নেই, ডায়াবিটিস নেই, বাত নেই। চোখে ছানি পড়ে নি, তবে দৃষ্টি কমে গেছে। খাবার লোভ খুব আছে, কিন্তু পেটরোগা। কানে কখনও ভাল শোনেন, কখনও খুব কম শোনেন। দোষের মধ্যে মাঝে মাঝে স্মৃতির ওলটপালট হয়, অতীত আর বর্তমান গুলিয়ে ফেলেন, কেউ প্রতিবাদ করলে চটে ওঠেন। মেজাজ সাধারণত ভালই থাকে, গল্প করতে ভালবাসেন, মাঝে মাঝে প্রলাপ বকেন, আবার বুদ্ধিমানের মতন কথাও বলেন। খবর জানবার আগ্রহ খুব আছে, কাগজে কি লিখেছে তা তাঁর নাতির কাছ থেকে প্রত্যহ শোনেন। বেশী তামাক খাওয়া বারণ, কিন্তু জয়রাম হাত থেকে গড়গড়ার নল নামাতে চান না, কলকে নিবে গেলেও টের পান না।