পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
চমৎকুমারী ইত্যাদি

ভাববেন না জিতেনবাবু। আপনার প্রত্যেক আলমারিতে আমি পাঁচটি করে কাঁকড়াবিছে ছেড়ে দেব আর গুটিদশেক ডিম। কেউ বই চাইলে বলবেন, আলমারি বিছেয় ভরতি, বই নিতে পারেন অ্যাট ইওর রিস্ক।

 জিতেনবাবু রাজী হলেন, গুপী সায়েব যথোচিত ব্যবস্থা করল। তার পর ডকটর নশকর এসে ওমর খাইয়াম চাইলেন। জিতেনবাবু বললেন, মহা মুশকিল সার, সব আলমারি বিছেয় ভরে গেছে। এই সেদিন আমার ভাগনেকে কামড়েছে, বেচারা হাসপাতালে আছে। আমার তো হাত দেবার সাহস নেই। আপনি যদি নিরাপদ মনে করেন তবে বইটা খুঁজে বের করে নিতে পারেন। ডকটর নশকর সন্দিগ্ধ মনে আলমারিতে উঁকি মেরে দেখলেন, কাঁকড়াবিছে সঙিন খাড়া করে পাহারা দিচ্ছে। তিনি তখনই ওবাবা বলে প্রস্থান করলেন।

 এইবার গুপী সায়েবের মহত্তম অবদানের কথা শুনুন। কিছুকাল তার দেখা পাই নি, হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলা টেলিফোন বেজে উঠল। কে আপনি? উত্তর এল, আমি গুপী, আপনাদের গুপী সায়েব, মুচীপাড়া থানা থেকে বলছি। আমাকে গ্রেপতার করেছে, শিগগির আসুন, বেল দিতে হবে।

 থানায় গিয়ে দেখলুম, একটা সরু কঠের বেঞ্চে বসে গুপী সায়ের পা দোলাচ্ছে, দারোগা গুলজার হোসেন তাঁর চেয়ারে বসে কটমট করে তার দিকে চেয়ে আছেন। গুপীর পশেই বেঞ্চে আর একটি লোক বসে আছে, রোগা, বেঁটে, অল্প দাড়ি আছে, পরনে ময়লা ইজার ফরসা জামা, মাথায় টুপি। লোকটি কাতর স্বরে মাঝে মাঝে ‘বাপ রে বাপ' বলছে আর একটা গামলায় বরফ দেওয়া জলে হাত ডোবাচ্ছে। আশ্চর্য হয়ে আমি জিজ্ঞাসা করলুম, ব্যাপার কি ইনস্পেকটার সাহেব?

 গুলজার হোসেন বললেন, এই গোপী ঘোষ আপনার ফ্রেণ্ড? অতি ভয়ানক লোক, এই বেচারা চোট্টু মিঞার জান লিয়েছেন।