বিধু মাস্টার বললেন, বেশ, সাড়ে তিনটেয় ছুটি দেব। আমিও তোদের সঙ্গে যাব। দাড়িবাবুর কথা শুনেছি বটে।
চাদরাবাগ অনেক দূর, আমরা প্রায় সাড়ে চরটের সময় বিভূতিবাবর বাড়ি পৌঁছলুম, দাড়িবাবু সেখানেই উঠেছেন। বারান্দায় একটা দড়ির খাটিয়ায় বসে তিনি হুঁকো টানছিলেন। আমাদের দলটিকে দেখে তাঁর বোধ হয় একটু আমোদ হল, নিবিড় কালো দাড়িগোঁফের তিমির ভেদ করে সাদা দাঁতে একটা হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল। সেকালে ব্রাহ্মরা প্রায় সকলেই দাড়ি রাখতেন, অব্রাহ্মদেরও অনেকের বড় বড় দাড়ি ছিল। কিন্তু সেসব দাড়ি এই নবাগত ভদ্রলোকের দাড়ির কাছে দাঁড়াতেই পারে না।
বিধু মাষ্টার নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, এই ছেলেরা আপনাকে দেখতে এসেছে মশাই, কিছুতেই ছাড়বে না, তাই আধ ঘণ্টা আগেই ক্লাস বন্ধ করতে হল।
দাড়িধারী ভদ্রলোকের নাম বনোয়ারী বাবু। তিনি প্রসন্ন বদনে বললেন, বেশ বেশ, দেখবে বইকি, দেখাবার জন্যেই তো রেখেছি। যত ইচ্ছে হয় দেখ বাবারা, পয়সা দিতে হবে না।
দাড়িটি বনোয়ারী বাবুর গলায় কম্ফর্টরের মতন জড়ানো ছিল, এখন তিনি দাঁড়িয়ে উঠে আলুলায়িত করলেন। হাঁটুর নীচে পর্যন্ত ঝুলে পড়ল।
সবিস্ময় আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়ে আমরা একযোগে বলে উঠলাম, উ রে বাবা!
বনোয়ারী বাবু বললেন, কিছু জিজ্ঞাস্য আছে কি? টেনে দেখতে পার, আমার দাড়ি যাত্রার দলের মুনি-ঋষিদের মতন টেরিটিবাজারের নকল দাড়ি নয়। এই বলে তিনি দাড়ি ধরে বারকতক হেঁচকা টান দিলেন।