ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে আমি কেষ্টকে জিজ্ঞাসা করলাম, কি হয়েছে ভাই, প্রাণকান্ত বাবু পালিয়ে গেল কেন?
কেষ্ট বলল, বুঝতে পারলি না বোকা, এই ভৈরবীর সঙ্গে প্রাণকন্ত বাবুর লভ হয়েছিল।
৩। মধু-কুঞ্জ সংবাদ
সেকালেও বদমাশ ছেলে ছিল, কিন্তু এখনকার মতন তারা কলেকটিভ অ্যাকশন নিতে জানত না। মাষ্টাররা তখন বেপরোয়া ভাবে বেত লাগাতেন, ছেলেরা তা শিক্ষারই অঙ্গ মনে করত, মা-বাপরাও আপত্তি করতেন না।
বেত মারায় আমাদের মধুসূদন মাষ্টারের জুড়ি ছিল না। দোষ করলে তো মারতেনই, বিনা দোষেও শুধু হাতের সুখের জন্যে মারতেন। তিনি একটি নতুন শাস্তি আবিষ্কার করেছিলেন— রসমোড়া, অর্থাৎ পেটের চামড়া খামচে ধরে মোচড় দেওয়া।
মধু মাষ্টার বাঙলা পড়াতেন। বয়স পঁচিশ-ছাব্বিশ, কালো রঙ, একমুখ দাড়িগোঁফ, তাতে চেহারাটি বেশ ভীষণ দেখাত। তখনও তাঁর বিবাহ হয় নি, বাড়িতে শুধু বিধবা বিমাতা আর দশ-এগারো বছরের একটি আইবুড়ো বৈমাত্র ভগ্নী। শুনতুম দেশে তাঁর যথেষ্ট বিষয়সম্পত্তি আছে, শুধু ছেলে ঠেঙাবার লোভেই নানা জায়গায় মাষ্টারি করেছেন।
আমাদের ক্লাসের একটি ছেলের নাম কুঞ্জ। বয়স চোদ্দ-পনরো, আমাদের চাইতে ঢের বড়। একটু পাগলাটে, লেখাপড়ায় অত্যন্ত কাঁচা, তিন বৎসর প্রমোশন পায় নি।