দীনেশের ভাগ্য
জয়গোপাল সেন, জীবনকৃষ্ণ দত্ত, আর গোলোকবিহারী হালদার কাছাকাছি বাস করেন। জয়গোপাল নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব, ভক্তিশাস্ত্রের চর্চা করেন, আত্মা ভগবান আর পরকাল সম্বন্ধে তাঁর বাঁধাধরা মত আছে। জীবনকৃষ্ণ গোঁড়া পাষণ্ড নাস্তিক, বিজ্ঞান নিয়ে নাড়াচাড়া করেন, আত্মা ভগবান পরকাল মানেন না। তাঁর মতে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড হচ্ছে দেশ-কালের একটি গাণিতিক জগাখিচুড়ি, তাতে নিরন্তর ছেট বড় তরঙ্গ উঠছে আর ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রন পজিট্রন প্রভৃতি হরেক রকম অতীন্দ্রিয় কণিকা আধসিদ্ধ খুদের মতন বিজবিজ করছে; মানষের চেতনা সেই খিচুড়িরই একটু ধোঁয়া অর্থাৎ তুচ্ছ বাই-প্রডক্ট। গোলোকবিহারী হচ্ছেন আধা-আস্তিক আধা-পাষণ্ড, তিনি কি মানেন বা মানেন না তা খোলসা করে বলেন না। তিন জনেরই বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে, সুতরাং মতিগতি বদলাবার সম্ভাবনা কম। মতের বিরোধ থাকলেও এঁরা পরম বন্ধু রোজ সন্ধ্যাবেলা জয়গোপালের বাড়িতে আড্ডা দেন। সম্প্রতি দশ দিন আড্ডা বন্ধ ছিল, কারণ জয়গোপাল কাশী গিয়েছিলেন। আজ সকালে তিনি ফিরেছেন, সন্ধ্যার সময় পূর্ববৎ আড্ডা বসেছে।
গোলোক হালদার প্রশ্ন করলেন, তোমার শালা দীনেশের খবর কি জয়গোপাল, এখন একটু সামলে উঠেছে? আহা, অমন চমৎকার মানুষ, কি শোকটাই পেল! এক মাসের মধ্যে স্ত্রী আর বড় বড় দুটি ছেলে কলেরায় মারা গেল, আবার কুবের ব্যাংক ফেল হওয়ায় দীনুর গচ্ছিত টাকাটাও উবে গেল। এমন বিপদেও মানষে পড়ে!
দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে জয়গোপাল বললেন, সবই শ্রীহরির ইচ্ছা, কেন