গোলোক। তার মানে তুমিও সময় বিশেষে একচোখো হও। জয়গোপাল যদি তার ইষ্টদেবতার শুধু সদ গুণই দেখে আর তাতেই আনন্দ পায় তবে তুমি দোষ ধরবে কেন?
জয়গোপাল হাত নেড়ে বললেন, চুপ কর গোলোক, এ তোমার অত্যন্ত অন্যায়। ভগবানের লীলার সঙ্গে মানুষের আচরণ তুলনা করা মহাপাপ, যাকে বলে ব্ল্যাসফেমি।
গোলোক। বেগ ইওর পার্ডন, আমার অপরাধ হয়েছে। আচ্ছা জীবনকেষ্ট, বন্দে মাতরম্ আর জন-গণ-মন গান তোমার কেমন লাগে?
জীবন। ভালই লাগে। তবে বঙ্গমাতা ভারতমাতা ভারতভাগ্যবিধাতা কেউ আছেন তা মানি না।
গোলোক। আমাদের এই বাঙলা দেশ সুজলা সুফলা বহুবলধারিণী তারিণী ধরণী ভরণী—এ সব বিশ্বস কর? ভাগ্যবিধাতা আমাদের মঙ্গল করবেন তা মান?
জীবন। না, ও সব শুধু কবিকল্পনা। কবিদের যা আকাঙ্ক্ষা, ভবিষ্যতে যা হবে আশা করেন, তাই তাঁরা মনগড়া দেবতায় আরোপ করেন। এ হল পোয়েটিক লাইসেন্স, কবিতায় যুক্তি না থাকলেও দোষ হয় না।
গোলোক। অর্থাৎ কবিদের উইশফল থিংকিংএ তোমার আপত্তি নেই। ভক্তরাও এক রকম কবি, তাঁদের ইষ্টদেবতাও ইচ্ছাময়, জয়গোপাল যা ইচ্ছা করে ভাই ভগবানে আরোপ করে আনন্দ পায়।
আবার হতে নেড়ে জয়গোপাল বললেন, তুমি কিছুই জান না। ভক্তরা মোটেই আরোপ করেন না, সচ্চিদানন্দ ভগবানের সত্য স্বরূপই উপলব্ধি করেন। তোমাদের মতন চার্বাকদের সে শক্তি নেই।
জীবন। আচ্ছা গোলোক, তুমি সত্যি করে বল তো, ভগবান মান কিনা।