পাতা:চমৎকুমারী ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দীনেশের ভাগ্য
৬৫

 গোলোক। হরেক রকম ভগবান আছেন, কতক মানি কতক মানি না। ঐতিহাসিক আর আধা-ঐতিহাসিক মহাপুরুষদের ভগবান বলে মানি, যেমন বুদ্ধ, যীশু আর বঙ্কিমচন্দ্রের শ্রীকৃষ্ণ। এঁরা করুণাময়, কিন্তু সর্বশক্তিমান নন। দেখতেই পাচ্ছ, এঁদের চেষ্টায় বিশেষ কিছু কাজ হয় নি। করুণাময় আর সর্বশক্তিমান পরস্পরবিরোধী, সে রকম ভগবান কেউ নেই। মানুষের কোনও গুণ বা দোষ ভগবানে থাকতে পারে না, তিনি ভালও নন মন্দও নন, দয়ালুও নন নিষ্ঠুরও নন। তাঁর কোনও ইচ্ছা উদ্দেশ্য বা মতলব থাকা অসম্ভব। যে অপূর্ণ, যার কোনও অভাব আছে, তারই উদ্দেশ্য থাকে। পূর্ণব্রহ্মের অভাব নেই, কিছু করবারও নেই, তিনি স্থান কাল শুভ অশুভ সমস্তের অতীত। তিনি একাধারে জ্ঞাতা জ্ঞেয় আর জ্ঞান। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের একটি নগণ্য কণা এই পৃথিবী, তারই একটা অতি নগণ্য কীটাণুকীট আমি, ব্রহ্মের স্বরূপ এর চাইতে বেশী বোঝা আমার সাধ্য নয়।

 জয়গোপাল। গোলোকের কথা কতকটা ঠিক। কিন্তু সাধকদের হিতার্থে ব্রহ্মের যে রূপ গুণ কল্পনা করা হয় তাও সত্য। ভগবানের মঙ্গলময় রূপ বোঝা মানুষের অসাধ্য নয়, শ্রদ্ধাবান ভক্ত তা বুঝতে পারেন। আমাদের দীনেশ নিষ্পাপ, আপাতত যতই দুঃখ পাক, মঙ্গলময়ের করুণা থেকে সে বঞ্চিত হবে না।


ক মাস পরের কথা। সন্ধ্যাবেলা তিন বন্ধু যথারীতি মিলিত হয়েছেন। ডাকপিয়ন একটা চিঠি দিয়ে গেল। জয়গোপাল বললেন, এ যে দীনেশের চিঠি, অনেক দিন পরে লিখেছে।

 জয়গোপাল চিঠিটা খুলে পড়লেন, তার পর মুখভঙ্গী করে বললেন, ছি ছি ছি।