ভূষণ বলল, অমন করে তুমি কেঁদো না সাগর কাকা, তাহলে আমার মাথা বিগড়ে যাবে।
চোখ মুছতে মুছতে সাগর বলল, উকিল বাবু এখনও আশা ছাড়েন নি, শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবেন। বললেন, আপীল করবেন।
—আপীল আবার কেন। যা হবার হয়ে গেছে, আর কিছুই করবার দরকার নেই, মিথ্যে টাকা বরবাদ হবে।
—বরবাদ নয় রে, তোকে বাঁচাবার জন্যে খরচ হবে। পোষ্টাপিসে তোর যে পঁয়ত্রিশ শ টাকা ছিল তোর কথামত তার সবটাই তুলে নিয়ে আমার কাছে রেখেছি। তা থেকে দু শ আন্দাজ খরচ হয়েছে, বাকী সবই তো রয়েছে। তাতে না কুলয় তো আমরা সবাই চাঁদা তুলে অপীলের খরচ যোগাব।
—উকিল আদিত্যবাবু কত টাকা নিয়েছেন?
—নিজের জন্য একপয়সও নেন নি, শুধু আদালতের খরচ বাবদ কিছু নিয়েছেন। বলেছেন, ভূষণকে যদি বাঁচাতে পারতুম তবেই ফী নিতুম। তিনি আর তাঁর বন্ধু উকিলরা সবাই বলেছেন, আপীল করলে নিশ্চয় রায় পালটে যাবে—লম্বা জেল হলেও তোর প্রাণটা তো রক্ষা পাবে।
—খবরদার আপীল করবে না। দশ-বিশ বছর জেলে থাকার চাইতে চটপট মরা ঢের ভাল।
—নবীনকে ছোরা মেরে খুন করলি কেন রে হতভাগা? তার ঢাইতে যদি পাঁচসেরী হম্বর দিয়ে হাঁটুতে এক ঘা লাগাতিস তা হলে নব্নে মরত না, চিরটা কাল খোঁড়া হয়ে বেঁচে থাকত আর ভাবত— হাঁ, ভূষণ পাল সাজা দিতে জানে বটে। তোরও বড় জোর দু-চার বছর জেল হত।