পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৬
চয়নিকা

নয়ন চুম্বন করো, স্নিগ্ধ হস্তখানি
ললাটে বুলায়ে দাও, না কহিয়া বাণী
সান্ত্বনা ভরিয়া প্রাণে কবিরে তোমার
ঘুম পাড়াইয়া দিয়া কখন আবার
চলে যাও নিঃশব্দ চরণে।
সেই তুমি
মূর্তিতে দিবে কি ধরা। এই মর্ত্যভূমি
পরশ করিবে রাঙা চরণের তলে?
অন্তরে বাহিরে বিশ্বে শূন্যে জলে স্থলে
সর্ব ঠাঁই হতে, সর্বময়ী আপনারে
করিয়া হরণ—ধরণীর এক ধারে
ধরিবে কি এক-খানি মধুর মুরতি।
নদী হতে লতা হতে আনি’ তব গতি
অঙ্গে অঙ্গে নানা ভঙ্গে দিবে হিল্লোলিয়া,
বাহুতে বাঁকিয়া পড়ি গ্রীবায় হেলিয়া
ভাবের বিকাশভরে? কী নীল বসন
পরিবে সুন্দরী তুমি। কেমন কঙ্কণ
ধরিবে দু-খানি হাতে। কবরী কেমনে
বাঁধিবে, নিপুণ বেণী বিনায়ে যতনে।
কচি কেশগুলি পড়ি শুভ্র গ্রীবা-’পরে
শিরীষ কুসুম সম সমীরণভরে
কাঁপিবে কেমনে। শ্রাবণে দিগন্তপারে
যে-গভীর স্নিগ্ধদৃষ্টি ঘন মেঘভারে
দেখা দেয়—নব নীল অতি সুকুমার,
সে দৃষ্টি না জানি ধরে কেমন আকার,
নারীচক্ষে। কী সঘন পল্লবের ছায়,
কী সুদীর্ঘ কী নিবিড় তিমির-আভায়
মুগ্ধ অন্তরের মাঝে ঘনাইয়া আনে