পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
চয়নিকা

অকাতরে; পরিতাপ-জর্জর পরানে
বৃথা ক্ষোভে নাহি চায় অতীতের পানে,
ভবিষ্যৎ নাহি হেরে মিথ্যা দুরাশায়—
বর্তমান-তরঙ্গের চূড়ায় চূড়ায়
নৃত্য ক’রে চলে যায় আবেশে উল্লাসি,’—
উচ্ছৃঙ্খল সে-জীবন সে-ও ভালোবাসি—
কতবার ইচ্ছা করে সেই প্রাণঝড়ে
ছুটিয়া চলিয়া যাই পূর্ণপালভরে
লঘু তরী সম।

হিংস্র ব্যাঘ্র অটবীর—
আপন প্রচণ্ড বলে প্রকাণ্ড শরীর
বহিতেছে অবহেলে;—দেহ দীপ্তোজ্জ্বল
অরণ্যমেঘের তলে প্রচ্ছন্ন-অনল
বজ্রের মতন—রুদ্র মেঘমন্দ্রস্বরে
পড়ে আসি’ অতর্কিত শিকারের ’পরে
বিদ্যুতের বেগে, অনায়াস সে মহিমা—
হিংসাতীব্র সে আনন্দ সে দৃপ্ত গরিমা
ইচ্ছা করে একবার লভি তার স্বাদ;—
ইচ্ছা করে বার বার মিটাইতে সাধ
পান করি’ বিশ্বের সকল পাত্র হতে
আনন্দমদিরাধারা নব নব স্রোতে।

হে সুন্দরী বসুন্ধরে, তোমা পানে চেয়ে
কতবার প্রাণ মোর উঠিয়াছে গেয়ে
প্রকাণ্ড উল্লাসভরে; ইচ্ছা করিয়াছে
সবলে আঁকড়ি’ ধরি এ বক্ষের কাছে