পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
চয়নিকা

পুরাতন ভৃত্য

ভূতের মতন চেহারা যেমন, নির্বোধ অতি ঘোর।
যা-কিছু হারায়, গিন্নি বলেন, “কেষ্টা বেটাই চোর।”
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত, শুনেও শোনে না কানে।
ষত পায় বেত, না পায় বেতন, তবু না চেতন মানে।
বড়ো প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ চীৎকার করি’ “কেষ্টা,”—
যত করি তাড়া, নাহি পাই সাড়া, খুঁজে ফিরি সারা দেশটা।
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে তিনখানা ক’রে আনে,
তিনখানা দিলে একখানা রাখে, বাকি কোথা নাহি জানে।
যেখানে সেখানে দিবসে দুপুরে নিদ্রাটি আছে সাধা।
মহাকলরবে গালি দিই যবে “পাজি হতভাগা গাধা”
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে, দেখে জ্ব’লে যায় পিত্ত।
তবু মায়া তাব ত্যাগ করা ভার—বড়ো পুরাতন ভৃতা।৷

ঘরের কর্ত্রী রুক্ষ-মূর্তি, বলে “আর পারি নাকো,
রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার কেষ্টারে লয়ে থাকে॥
না মানে শাসন, বসন বাসন অশন আসন যত
কোথায় কী গেল, শুধু টাকাগুলো যেতেছে জলের মতো।
গেলে সে বাজার, সারাদিনে আর দেখা পাওয়া তার ভার,—
করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি ভৃত্য মেলে না আর।”
শুনে মহারেগে ছুটে যাই বেগে, আনি তার টিকি ধ’রে,—
বলি তারে “পাজি, বেরো তুই আজই দূর করে দিনু তোরে।”
ধীরে চলে যায়, ভাবি গেল দায়;—পর-দিন উঠে দেখি
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি।
প্রসন্ন মুখ, নাহি কোনো দুখ, অতি অকাতর চিত্ত,
ছাড়ালে না ছাড়ে, কী করিব তারে, মোর পুরাতন ভৃত্য।৷