পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
১৪৯

সে-বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা করিয়া দালাল গিরি।
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন বারেক আসিব ফিরি’।
পরিবার তায় সাথে যেতে চায়, —বুঝায়ে বলিনু তারে—
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য; —নহিলে খরচ বাড়ে।
লয়ে রশারশি করি’ কশাকশি পোঁটলা পুঁটুলি বাঁধি’
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে গৃহিণী কহিল কাঁদি’,—
“পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে কষ্ট অনেক পাবে।”
আমি কহিলাম, “আরে রাম রাম, নিবারণ সাথে যাবে।”
রেলগাড়ি ধায়;—হেরিলাম হায় নামিয়া বর্ধমানে—
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত তামাক সাজিয়া আনে।
স্পর্ধা তাহার হেন মতে আর কত বা সহিব নিত্য।
যত তারে দুষি তবু হনু খুশী হেরি’ পুরাতন ভৃত্য।৷

নামিনু শ্রীধামে; দক্ষিণে বামে পিছনে সমুখে যত
লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্রাণটা করিল কণ্ঠাগত।
জন ছয় সাথে মিলি’ একসাথে পরম বন্ধুভাবে
করিলাম বাসা, মনে হোলো আশা আরামে দিবস যাবে।
কোথা ব্রজবালা, কোথা বনমালা, কোথা বনমালী হরি,
কোথা হা হন্ত, চিরবসন্ত, আমি বসন্তে মরি।
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মতো বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ।
আমি একা ঘরে, ব্যাধি-থরশরে ভরিল সকল অঙ্গ।
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ—“কেষ্টা আয় রে কাছে,
এতদিনে শেষে আসিয়া বিদেশে প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে।”
হেরি তার মুখ ভ’রে ওঠে বুক, সে যেন পরম বিত্ত।
নিশিদিন ধ’রে দাঁড়ায়ে শিয়রে মোর পুরাতন ভৃত্য।৷

মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল, শিরে দেয় মোর হাত;
দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম, মুখে নাই তার ভাত।