পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
চয়নিকা

জগতের উর্ণাজাল ছিঁড়ে টুটে কোথা যায় ভাগি’।
অনন্ত আঁধার মাঝে কেহ তব নাহিকো দোসর,
পশে না তোমার প্রাণে আমাদের হৃদয়ের আশ,
পশে না তোমার কানে আমাদের পাখিদের স্বর—
সহস্র জগতে মিলি রচে তব বিজন প্রবাস,
সহস্র শবদে মিলি বাঁধে তব নিঃশব্দের ঘর,
হাসি কাঁদি ভালোবাসি, নাই তব হাসি কান্না মায়া,
আসি থাকি চলে যাই, কত ছায়া কত উপছায়া।


তাই কি। সকলি মায়া? আসে থাকে আর মিলে যায়?
তুমি শুধু একা আছ, আর সব আছে আর নাই?
যুগযুগান্তর ধরে ফুল ফুটে, ফুল ঝরে তাই?
প্রাণ পেয়ে প্রাণ দিই সে কি শুধু মরণের পায়ে।
এ ফুল চাহে না কেহ? লহে না এ পুজা-উপহার?
এ প্রাণ, প্রাণের আশা, টুটে কি অসীম শূন্যতায়।
বিশ্বের উঠিছে গান, বধিরতা বসি সিংহাসনে?
বিশ্বের কাঁদিছে প্রাণ, শূন্যে ঝরে অশ্রুবারিধার?
যুগ-যুগান্তের প্রেম কে লইবে, নাই ত্রিভুবনে?
চরাচর মগ্ন আছে নিশিদিন আশার স্বপনে—
বাঁশি শুনে চলিয়াছি, সে কি হায় বৃথা অভিসার।
বোলো না সকলি স্বপ্ন সকলি এ মায়ার ছলন,
বিশ্ব যদি স্বপ্ন দেখে সে স্বপন কাহার স্বপন।
সে কি এই প্রাণহীন প্রেমহীন অন্ধ অন্ধকার।

8


ধ্বনি খুঁজে প্রতিধ্বনি প্রাণ খুঁজে মরে প্রতিপ্রাণ,
জগৎ আপনা দিয়ে খুঁজিছে তাহার প্রতিদান।
অসীমে উঠিছে প্রেম শুধিবারে অসীমের ঋণ—
যত দেয় তত পায়, কিছুতে না হয় অবদান।