পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৩৫

অতৃপ্ত বাসনা প্রাণে লয়ে
অবারিত প্রেমের ভবনে
যাহা পাই তাহা তুলি, খেলাই আপনা ভুলি’,
কী-যে রাখি কী যে ফেলি, বুঝিতে পারিনে।

ক্রমে আসে আনন্দ অলস,
কুসুমিত ছায়াতরুতলে;
জাগাই সরসীজল, ছিঁড়ি ব’সে ফুলদল,
ধূলি সে-ও ভালো লাগে খেলাবার ছলে।

অবশেষে সন্ধ্যা হয়ে আসে,
শ্রান্তি আসে হৃদয় ব্যাপিয়া,
থেকে থেকে সন্ধ্যাবায় ক’রে ওঠে হায় হায়,
অরণ্য মর্মরি ওঠে কাঁপিয়া কাঁপিয়া।

মনে হয় এ কি সব ফাঁকি,
এই বুঝি আর কিছু নাই।
অথবা যে-রত্ন তরে এসেছিনু আশা ক’রে
অনেক লইতে গিয়ে হারাইনু তাই।

সুখের কাননতলে বসি’
হৃদয়ের মাঝারে বেদনা,
নিরখি কোলের কাছে মৃৎপিণ্ড পড়িয়া আছে
দেবতারে ভেঙে ভেঙে করেছি খেলনা।

এরি মাঝে ক্লান্তি কেন আসে,
উঠিবারে করি প্রাণপণ,
হাসিতে আসে না হাসি, বাজাতে বাজে না বাঁশি,
শরমে তুলিতে নারি নয়নে নয়ন।