পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
চয়নিকা

মাঠের পরে মাঠ মাঠের শেষে
সুদূর গ্রামখানি আকাশে মেশে।
এধারে পুরাতন শ্যামল তালবন
সঘন সারি দিয়ে দাঁড়ায়ে ঘেঁসে।
বাঁধের জল-রেখা ঝলসে যায় দেখা,
জটলা করে তীরে রাখাল এসে।
চলেছে পথখানি কোথায় নাহি জানি,
কে জানে কত শত নূতন দেশে।

হায়রে রাজধানী পাষাণ কায়া।
বিরাট মুঠিতলে চাপিছে দৃঢ়বলে,
ব্যাকুল বালিকারে নাহিকো মায়া।
কোথা সে খোলা মাঠ, উদার পথ ঘাট,
পাখির গান কই, বনের ছায়া।

কে যেন চারিদিকে দাঁড়িয়ে আছে;
খুলিতে নারি মন শুনিবে পাছে।
হেথায় বৃথা কাঁদা, দেয়ালে পেয়ে বাধা
কাঁদন ফিরে আসে আপন কাছে।

আমার আঁখিজল কেহ না বোঝে।
অবাক হয়ে সবে কারণ খোঁজে।
“কিছুতে নাহি তোষ, সে-ও তো মহাদোষ,
গ্রাম্য বালিকার স্বভাব ও-যে।
স্বজন প্রতিবেশী এত-যে মেশামেশি,
ও কেন কোণে ব’সে নয়ন বোজে।”

কেহ-বা দেখে মুখ কেহ-বা দেহ,
কেহ-বা ভালো বলে, বলে না কেহ।