পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৫৭

আজি অন্ধকার দিবা, বৃষ্টি ঝরঝর,
দুরন্ত পবন অতি, আক্রমণে তার
অরণ্য উদ্যবাহু করে হাহাকার।
বিদ্যুৎ দিতেছে উঁকি ছিঁড়ি’ মেঘভার
খরতর বক্র হাসি শূন্যে বরষিয়া।
অন্ধকার রুদ্ধগৃহে একেলা বসিয়া
পড়িতেছি মেঘদুত; গৃহত্যাগী মন
মুক্তগতি মেঘপৃষ্ঠে লয়েছে আসন,
উড়িয়াছে দেশদেশান্তরে। কোথা আছে
সানুমান আম্রকূট; কোথা বহিয়াছে
বিমল বিশীর্ণ রেবা বিন্ধা-পদমুলে
উপল ব্যথিত-গতি; বেত্রবতীকূলে
পরিণত-ফল-শ্যাম জম্বুবনচ্ছায়ে
কোথায় দশার্ণ গ্রাম রয়েছে লুকায়ে
প্রস্ফুটিত কেতকীর বেড়া দিয়ে ঘেরা;
পথ-তরু-শাখে কোথা গ্রাম-বিহঙ্গেরা
বর্ষায় বাঁধিছে নীড়, কলরবে ঘিরে’
বনস্পতি; না জানি সে কোন্ নদীতীরে
যুথীবনবিহারিণী বনাঙ্গনা ফিরে,
তপ্ত কপোলের তাপে ক্লান্ত কর্ণোৎপল
মেঘের ছায়ার লাগি’ হতেছে বিকল;
ভ্রূবিলাস শেখে নাই কা’রা সেই নারী
জনপদ-বধূজন, গগনে নেহারি’
ঘনঘটা, ঊর্ধ্ব নেত্রে চাহে মেঘপানে,
ঘননীল ছায়া পড়ে স‍ুনীল নয়ানে;
কোন্ মেঘশ্যামশৈলে মুগ্ধ সিদ্ধাঙ্গনা
স্নিগ্ধ নবঘন হেরি’ আছিল উন্মনা
শিলাতলে, সহসা আসিতে মহা ঝড়
চকিতে চকিত হয়ে ভয়ে জড়সড়