পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
চয়নিকা

বিরহী বিহঙ্গ ডাকে সারানিশি তরু শাখে
যারে ডাকে তার দেখা পায় না অভাগা।
তবু ডাকে সারাদিন আশাহীন শ্রান্তিহীন,
একমাত্র কাজ তার ডেকে ডেকে জাগা।
আর সব কাজ ভুলি’ আকাশে তরঙ্গ তুলি’
সমুদ্র না জানি কারে চাহে অবিরত।
যত করে হায় হায়, কোনোকালে নাহি পায়,
তবু শূন্যে তোলে বাহু, ওই তার ব্রত।
কারে চাহি’ ব্যোমতলে গ্রহতারা লয়ে চলে,
অনন্ত সাধনা করে বিশ্বচরাচর।
সেইমতো সিন্ধুতটে ধূলিমাখা দীর্ঘজটে
খ্যাপা খাঁজে খুঁজে ফিবে পরশ-পাথর।

একদা শুধাল তারে গ্রামবাসী ছেলে,
“সন্ন্যাসীঠাকুর এ কী, কাঁকালে ও কী ও দেখি,
সোনার শিকল তুমি কোথা হতে পেলে।”
সন্ন্যাসী চমকি ওঠে, শিকল সোনার বটে,
লোহা সে হয়েছে সোনা জানে না কখন।
এ কী কাণ্ড চমৎকার তুলে দেখে বার বার,
আঁখি কচালিয়া দেখে, এ নহে স্বপন।
কপালে হানিয়া কর ব’সে পড়ে ভূমি-’পর,
নিজেরে করিতে চাহে নির্দয় লাঞ্চনা,—
পাগলের মতো চায়, কোথা গেল হায় হায়,
ধরা দিয়ে পলাইল সফল বাঞ্ছনা।
কেবল অভ্যাস মতো নুড়ি কুড়াইয়া কত
ঠন ক’রে ঠেকাইত শিকলের পর,
চেয়ে দেখিত না, নুড়ি দূরে ফেলে দিত ছুঁড়ি’,
কখন ফেলেছে ছুঁড়ে পরশ-পাথর।