পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
চয়নিকা

সে-কথায় কর্ণপাত
নাহি করে কোনো জন। “কী জানি দৈবাং
এটা ওটা আবশ্যক যদি হয় শেষে
তখন কোথায় পাবে বিভুই বিদেশে।—
সোনা-মুগ সরুচাল সুপারি ও পান,
ও-হাঁড়িতে ঢাকা আছে দুই চারি খান
গুড়ের পাটালি; কিছু ঝুনা নারিকেল;
দুই ভাণ্ড ভালো রাই সরিষার তেল
আমসত্ব আমচুর; সের দুই দুধ,
এই সব শিশি কৌটা ওষুধ বিষুধ।
মিষ্টান্ন রহিল কিছু হাঁড়ির ভিতরে,
মাথা খাও, ভুলিয়ো না, খেয়ো মনে ক’রে।”
বুঝিছু যুক্তির কথা বৃথা বাক্যব্যয়,
বোঝাই হইল উঁচু পর্বতের ন্যায়।
তাকানু ঘড়ির পানে, তার পরে ফিরে
চাহিনু প্রিয়ার মুখে কহিলাম ধীরে
“তবে আসি।” অমনি ফিরায়ে মুখখানি
নতশিরে চক্ষু-’পরে বস্ত্রাঞ্চল টানি’
অমঙ্গল অশ্রুজল করিল গোপন।
বাহিরে দ্বারের কাছে বসি’ অন্যমন
কন্যা মোর চারি বছরের, এতক্ষণ
অন্য দিনে হয়ে যেত স্নান সমাপন,
ছুটি অন্ন মুখে না তুলিতে আঁধিপাতা
মুদিয়া আসিত ঘুমে আজি তার মাতা
দেখে নাই তারে; এত বেলা হয়ে যায়
নাই স্নানাহার। এতক্ষণ ছায়াপ্রায়
ফিরিতেছিল সে মোর কাছে কাছে ঘেঁসে
চাহিয়া দেখিতেছিল মৌন নির্নিমেষে