পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চয়নিকা
৭৯

বিদায়ের আয়োজন। শ্রান্ত দেহে এবে
বাহিরের দ্বারপ্রান্তে কী জানি কী ভেবে
চুপিচাপি বসেছিল। কহিনু যখন
“মাগো, আসি,” সে কহিল বিষণ্ননয়ন
ম্লান মুখে, “যেতে আমি দিব না তোমায়।”
যেখানে আছিল ব’সে রহিল সেথায়,
ধরিল না বাহু মোর, রুধিল না দ্বার,
শুধু নিজ হৃদয়ের স্নেহ-অধিকার
প্রচারিল—“যেতে আমি দিব না তোমায়।”
তবুও সময় হোলো শেষ, তবু হায়
যেতে দিতে হোলো।

ওরে মোর মৃঢ় মেয়ে,
কে রে তুই, কোথা হতে কী শকতি পেয়ে
কহিলি এমন কথা, এত স্পর্ধাভরে—
“যেতে আমি দিব না তোমায়।” চরাচরে
কাহারে রাখিবি ধ’রে দুটি ছোটো হাতে,
গরবিনি, সংগ্রাম করিবি কার সাথে
বসি’ গৃহদ্বারপ্রান্তে শ্রান্ত ক্ষুদ্র দেহ,
শুধু লয়ে ওইটুকু বুকভরা স্নেহ।
ব্যথিত হৃদয় হতে বহু ভয়ে লাজে
মর্মের প্রার্থনা শুধু ব্যক্ত করা সাজে
এ জগতে,— শুধু ব’লে রাখা, “যেতে দিতে
ইচ্ছা নাহি।” হেন কথা কে পারে বলিতে
“যেতে নাহি দিব।” শুনি’ তোর শিশুমুখে
স্নেহের প্রবল গর্ববাণী, সকৌতুকে
হাসিয়া সংসার টেনে নিয়ে গেল মোরে,
তুই শুধু পরাভূত চোখে জল ভ’রে