পাতা:চয়নিকা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮২
চয়নিকা

ততবার কহে—“আমি ভালোবাসি যারে
সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে।
আমার আকাঙ্ক্ষাসম এমন আকুল,
এমন সকল-বাড়া, এমন অকূল,
এমন প্রবল, বিশ্বে কিছু আছে আর?”
এত বলি’, দর্পভরে করে সে প্রচার
“যেতে নাহি দিব।”— তখনি দেখিতে পায়।
শুধু তুচ্ছ ধূলিসম উড়ে’ চলে যায়
একটি নিঃশ্বাসে তার আদরের ধন,—
অশ্রুজলে ভেসে যায় দুইটি নয়ন,
ছিন্নমূল তরুসম পড়ে পৃথ্বিতলে
হতগর্ব নতশির।—তবু প্রেম বলে,
“সত্য-ভঙ্গ হবে না বিধির। আমি তার
পেয়েছি স্বাক্ষর দেওয়া মহা অঙ্গীকার
চির-অধিকার-লিপি।” তাই স্ফীতবুকে
সর্বশক্তি মরণের মুখের সম্মুখে
দাঁড়াইয়া সুকুমার ক্ষীণ তনুলতা
বলে’ ‘মৃত্যু তুমি নাই।’—হেন গর্ব কথা।
মৃত্যু হাসে বসি’। মরণ-পীড়িত সেই
চিরজীবী প্রেম আচ্ছন্ন করেছে এই
অনন্ত সংসার, বিষণ্ন-নয়ন-’পরে
অশ্রুবাষ্পসম, ব্যাকুল আশঙ্কাভরে
চির-কম্পমান। আশাহীন প্রান্ত আশা
টানিয়া রেখেছে এক বিষাদ-কুয়াশা
বিশ্বময়। আজি যেন পড়িছে নয়নে,
দুখানি অবোধ বাহু বিকল বাঁধনে
জড়ায়ে পড়িয়া আছে নিখিলেরে ঘিরে’,
স্তব্ধ সকাতর। চঞ্চল স্রোতের নীরে