মানুষটাকে ছোট মনে করিস নে।
আচ্ছা, বলিয়া সাবিত্রী হাসিয়া চলিয়া যাইতেছিল, মোক্ষদা আবার পিছন হইতে ডাকিয়া বলিল, শোন্, সাবিত্রী।
সাবিত্রী ফিরিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, কি?
আয় দেখি একবার আমার ঘরে, একখানা ঢাকাই কাপড় বের করে দি, পরে যা।
সাবিত্রী হাসি চাপিয়া বলিল, তুমি বার কর গে মাসী, আমি এখনি আসচি।
সতীশের খাওয়া প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছিল, সাবিত্রী ঘরে ঢুকিয়া বলিল, চোখ বুজে খাচ্চো নাকি?
সতীশ মুখ তুলিয়া বলিল, না।
কিন্তু, চোখ দুটি ত ঘুমে ঢুলে আসচে দেখচি।
বাস্তবিকই তাহার অত্যন্ত ঘুম পাইতেছিল। গত রাত্রির উচ্ছৃঙ্খল অত্যাচার আজ অসময়েই তাহার চোখের পাতা দুটিকে ভারী করিয়া আনিতেছিল, সে সলজ্জহাস্যে কবুল করিয়া বলিল, হাঁ, ভারী ঘুম পাচ্চে।
সাবিত্রী জিজ্ঞাসা করিল, আর কিছু চাই কি?
সতীশ তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, কিছু না, কিছু না; আমার খাওয়া হয়ে গেছে।
বাহিরে পায়ের শব্দে সাবিত্রী টের পাইল, মোক্ষদা আসিয়া দাঁড়াইয়াছে; বলিল, বাবু, আমাকে একখানি ঢাকাই শাড়ী কিনে দিতে হবে।
সে কোনদিনই কিছু চাহে না, সুতরাং এ কথার তাৎপর্য বুঝিতে না পারিয়া সতীশ আশ্চর্য হইয়া গেল। সে মোক্ষদার আগমন টের পায় নাই। মুখে তুলিয়া সবিস্ময়ে বলিল, সত্যি চাই?
সত্যি বৈ কি!
পরবে কখন?
আজ পরবার সময় নেই বলে কোনও দিন সময় হবে না, এমন কি কথা আছে। তাছাড়া আর একটি কথা; আমি খেটে খাই বলে মাসী দুঃখ করছিলেন, তাই মনে কচ্চি আর খেটে খাবো না-এখন থেকে বসে বসে খাবো।
সতীশ হাসিয়া বলিল, বেশ ত।
শুধুু বেশ হলেই ত হবে না, ওই সঙ্গে একটি দাসী না হলেও আর মান থাকচে না—তাও আপনাকে রেখে দিতে হবে। আপনাকেই-কথাটা শেষ করিতে পারিল না, মুখে আঁচল গুঁজিয়া দিয়া উৎকট হাসির বেগ রোধ করিতে লাগিল।
মোক্ষদা কাঁচা লোক নহে। সে একমুহুর্তে সমস্তটা বুঝিয়া লইয়া ঘরে ঢুকিয়া বলিল, বাবু বুঝি সাবিত্রীকে চেনেন?
সাবিত্রীর দিকে ফিরিয়া বলি, মাসীর সঙ্গে এতক্ষণ বুঝি তামাশা হচ্ছিল? তা এত ভালো কথা, আহ্লাদের কথা। আগে বললেই ত ঢুকে যেত। বলিয়া হাসিয়া বাহির হইয়া গেল।