হইয়া পড়িয়াছেন। সংস্কারকগণের উপরে ঘুরোপের প্রভাব প্রত্যক্ষ, সংস্করণ-বিরোধিগণের উপরে প্রচ্ছন্ন—দু’এর মধ্যে এইমাত্র প্রভেদ।
"সংস্কারক” ও সংস্করণ- বিরোধী
সংস্কারকগণ অসাধারণ অভ্যুদয়সম্পন্ন বিদেশীয় সমাজের বিধিব্যবস্থা ও অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানাদিকে যথাসাধ্য নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করিবার জন্য লালায়িত হইয়াছেন। আর এইরূপে বিদেশীয় সভ্যতা ও সাধনার বাহ্য উপকরণগুলিকে সযত্নে সংগ্রহ করিতে যাইয়া, স্বল্পবিস্তর আত্মহারা হইয়া পড়িতেছেন। স্বদেশী সভ্যতা ও সাধনার যে একটা অতি ভাল দিক্ আছে, এ কথা ইহাঁরা অস্বীকার করেন না। বরং এই ভালটুকুকে রক্ষা করিবার জন্যই যে সংস্কারের প্রয়োজন, ইহাই বলিয়া থাকেন। কিন্তু কোনো সমাজের বহিরঙ্গগুলিকে গ্রহণ করিয়া তার ভিতরকার প্রকৃতিগত আদর্শ ও স্বভাবকে বর্জ্জন করা যে কখনো সম্ভব হয় না, এটী তাঁহারা বোঝেন না। বিদেশীয় সমাজের বাহিরের উপকরণ ও আয়োজনগুলিকে প্রাণপণে সংগ্রহ করিব, আর স্বদেশের সমাজের ভিতরকার প্রাণটাকেও ধরিয়া রাখিব এবং তাহারই মধ্যে পূরিয়া দিয়া একটা উৎকষ্টতম সমাজ গড়িয়া তুলিব, ইহা যে একেবারে অসম্ভব ও অসাধ্য,— এই মোটা কথাটা অনেকেই তলাইয়া দেখেন না। প্রত্যেক জীবের আত্মপ্রয়োজনেই তার দেহটা গড়িয়া উঠে। জীবদেহের বহিরঙ্গগুলি একটা আকস্মিক ঘটনাপাতের অচেষ্টিত ফল নহে। সমাজ-জীবন এবং সমাজ-দেহ সম্বন্ধেও ইহাই সত্য। প্রত্যেক সমাজের রীতিনীতি, আচার-বিচার, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানাদি সেই সমাজের আত্মপ্রয়োজনে, তার আভ্যন্তরীণ জীবন-চেষ্টার ফলেই গড়িয়া উঠে, কোন আকস্মিক ঘটনাপাতে, আপনা হইতে গজায় না, অথবা অন্য সমাজ হইতেও উড়িয়া আসিয়া