পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপাধ্যায়ের স্বাদেশিকতা
১৩১

সম্ভব, উপাধ্যায় এমনটা কখনও ভাবিতেন বলিয়া বোধ হয় না। সে সময়ে দেশ ঘোরতর তামসিকতার দ্বারা আচ্ছন্ন হইয়াছিল বলিয়া তাহাকে একটা রাজসিক প্রেরণা প্রদান করা আবশ্যক হয়। এই জন্যই উপাধ্যায় জীবনের শেষ দশায় এই স্বাতন্ত্র্য-নীতি অবলম্বন করেন। কিন্তু রাজসিকতা ভারতের সভ্যতা ও সাধনার চিরন্তন বা উর্দ্ধতন লক্ষ্য যে নয়, উপাধ্যায় ইহা যেমন জানিতেন, এমন আর কেহ জানিতেন বলিয়াই বোধ হয় না। তবে যে সাত্ত্বিকতা চিরদিনই আমাদের সভ্যতা ও সাধনার চরম লক্ষ্য হইয়া আছে, সেই সাত্ত্বিকতাকে জাগাইতে হইলেই, সে অবস্থায়, প্রথমে দেশব্যাপী তামসিকতাকে রাজসিকতার দ্বারা অভিভূত করা আবশ্যক, উপাধ্যায় এ সত্যটাকে দৃঢ় করিয়া ধরিয়াছিলেন। রাষ্ট্রীয় কর্ম্মক্ষেত্রেই এই রাজসিকতাকে জাগাইয়া তোলা সহজ ও সর্ব্বাপেক্ষা নিরাপদ। তাহাতে ভবিষ্যতের সাত্ত্বিকতার পথও উন্মুক্ত হইবে, অথচ সমাজে কোনও প্রকারের সাংঘাতিক অরাজকতার প্রতিষ্ঠারও কোন বিশেষ আশঙ্কা থাকে না। এই জন্যই উপাধ্যায় রাষ্ট্রীয় জীবনে এই অভিনব স্বাতন্ত্র্যনীতি প্রচার করিয়াছিলেন। দেশের লোকের আত্মচৈতন্যকে জাগাইয়া তোলা, তাহাদিগের চক্ষুকে আপনার উপরে নিবদ্ধ করা, নিজের হাতে দেশের কাজ দশে মিলিয়া করিলে যে শিক্ষা, যে সংযম, যে শক্তি লাভ হয়, ইহাতে আপনাদের উপরে যে আস্থা জন্মে, ও এই আস্থার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণে যে উৎসাহ, অন্তরে যে আশা, পেশিতে যে বল সঞ্চারিত হয়, এই সকলের জন্যই উপাধ্যায় এই নীতি প্রচার করিতে প্রবৃত্ত হন, নতুবা গবর্ণমেণ্টের সঙ্গে গায়ে পড়িয়া বিরোধ বাঁধানই যে তাঁর অভিপ্রায় ছিল, এমন কথা কিছুতেই বলিতে পারি না।

 কিন্তু উপাধ্যায় মহাশয়ের স্বাদেশিকতার সত্য আদর্শটাকে ধরিতে হইলে, বিশেষভাবে তাঁর সমাজ-নীতির আলোচনা করা