পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপাধ্যায়ের সমাজ-নীতি
১৩৫

 সর্ব্বত্রই ব্যক্তিত্বাভিমানী অনধীনতার আদর্শের সঙ্গে সমাজানুগত্যের একটা নিত্য বিরোধ জাগিয়া রহে। যেখানেই এই অনধীনতার ভাবটা প্রবল হইয়া উঠে, সেই খানেই সমাজানুগত্যটা ধর্ম্মবিগর্হিত বলিয়া, পরিত্যক্ত হয়। প্রোটেষ্ট্যাণ্ট খৃষ্টীয়ান্ সম্প্রদায়ে এই ব্যক্তিত্বাভিমানী অনধীনতার ভাব খুবই প্রবল। এই জন্য ইহাদের মধ্যে সমাজানুগত্যও ক্রমশই কমিয়া গিয়াছে, এখন নাই বলিলেও চলে। অন্যদিকে রোমান ক্যাথলিক খৃষ্টীয় সঙ্ঘে, শাস্ত্র ও গুরু উভয়ের প্রাধান্য-মর্য্যাদা সমভাবে রক্ষিত হইয়া, ধর্ম্মসাধনে ও সমাজ-জীবনে, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যক্তিত্বাভিমানী অনধীনতার ভাবকে অনেকটা সংযত করিয়া রাখিয়াছে। এই জন্য এখানে সমাজানুগতা যে ধর্ম্মের একটা শ্রেষ্ঠ অঙ্গ, এ ভাবটা এ পর্য্যন্ত একেবারে নষ্ট হইয়া যায় নাই। এই কারণেই, রোমক-সঙ্ঘের আশ্রয় গ্রহণ করিবার সঙ্গে সঙ্গেই উপাধ্যায়ের সমাজানুগত্যের ভাবটাও পরিপূর্ণ হইয়া উঠিতে আরম্ভ করে।

 অতএব এই সমাজানুগত্যটা ভাল হউক মন্দ হউক; যুক্তিসঙ্গত বা অযৌক্তিক আর যাহা কিছুই হউক না কেন, ইহার অন্তরালে যে একটা বিরাট ধর্ম্মতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্ব বিদ্যমান ছিল, এ কথাটা অস্বীকার করা যায় না। একটা খেয়ালের চাপে উপাধ্যায় প্রাচীন সমাজশাসন পরিত্যাগ করেন নাই; খেয়ালের চাপে তাহার পুনঃ-প্রতিষ্ঠার চেষ্টাতেও প্রবৃত্ত হন নাই। এই জন্য তাঁহাকে পুনরাবর্ত্তনকারী বা রি-অ্যাকষণারীও বলা যায় না।

 ফলতঃ আমাদের সমাজের যাহা যেরূপ আছে, তাহা সেইরূপই থাকিবে বা থাকা বাঞ্ছনীয়, উপাধ্যায়কে কোনও দিন এমন কথা বলিতে শুনি নাই। “বন্দে মাতরম্” পত্র প্রতিষ্ঠার সময়ে এই সম্বন্ধে উপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার অনেক কথা হয়। নূতন কাগজ সমাজ-সংস্কার সম্বন্ধে কি নীতি অবলম্বন