পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
চরিত-কথা

বেশী বলিতেন না, ইহার প্রকৃত মর্ম্ম গ্রহণ করা সহজ বা সম্ভব হইবে না।

 উপাধ্যায়ের ভূয়োদর্শন এই ভাবটীকে বিশেষভাবে বাড়াইয়া তুলিয়াছিল। বিলাত যাইবার পূর্ব্বে, করাচীতে যখন বোমক খৃষ্টীয়-ধর্ম্মের অনুশীলন করিতেছিলেন, তখন, উপাধ্যায় যতটুকু পরিমাণে সমাজসংস্কারের পক্ষপাতী ছিলেন, বিলাত হইতে ফিরিয়া আসিয়া ততটুকুও ছিলেন কি না, সন্দেহ। আমরা সমাজ-সংস্কার করিতে যাইয়া কোন্ পথে চলিতেছি, এই পথ ধরিয়া চলিলে পরিণামে কোন্ স্থানে যাইয়া পৌঁছাইতে হইবে,—বিলাতে যাইয়া ইংরেজ-সমাজের গতিবিধি ও রীতিনীতি, মত ও আদর্শ এবং ভাবস্বভাব সূক্ষ্মভাবে পর্য্যবেক্ষণ করিয়া, উপাধ্যায় তাহা বেশ করিয়া ধরিতে পারিয়াছিলেন। আর ঐ পথ যে আমাদের পক্ষে ভয়াবহ পরধর্ম্মের পথ,—উপাধ্যায় ইহাও বিশ্বাস করিতেন। এই কারণেই বিলাত হইতে ফিরিয়া আসিয়া তিনি কতকটা পরিমাণে স্বদেশের সামাজিক জীবনের ও সামাজিক আচার-ব্যবহারের পক্ষপাতী হইয়া উঠেন। কামোপভোগপ্রবণ যৌবনকালে যাঁরা বিলাত যান, তাঁদের কথা যাহাই হউক না কেন, বেশী বয়সে, বিশেষতঃ প্রকৃত ধর্ম্মজীবনের কথঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া, যাঁহারা বিলাতী সমাজের ভাবস্বভাব ও মতিগতি পরীক্ষা করিবার প্রত্যক্ষ অবসর প্রাপ্ত হন, তাঁহাদের অনেকেই, বোধ হয়, স্বদেশের রীতিনীতি ও আচারব্যবহারের সমধিক পক্ষপাতী হইয়া বিলাত হইতে স্বদেশে ফিরিয়া আইসেন। অন্ততঃ উপাধ্যায় মহাশয় সম্বন্ধে এরূপই ঘটিয়াছিল। এই জন্যই উপাধ্যায় মহাশয় শেষ জীবনে সমাজ-সংস্কারকার্য্যে হস্তক্ষেপ করিতে এতটা শঙ্কিত হইতেন।

 এরূপ শঙ্কা যে একান্তই অস্বাভাবিক বা নিতান্তই অযৌক্তিক, এমনই কি বলিতে পারা যায়? ইংরেজি শিখিয়া, য়ুরোপীয় ঝাঁঝের ব্যক্তিত্বাভিমানী