পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উপাধ্যায়ের সমাজ-নীতি
১৩৯

অনধীনতার ও গণতন্ত্রতার আদর্শে মুগ্ধ হইয়া, আমরা এক সময়ে সমাজ-সংস্কারব্যাপারটা যত সহজ মনে করিয়াছিলাম, বাস্তবিক যে তাহা তত সহজ নহে, এ জ্ঞান অনেকেরই অল্পে অল্পে জন্মিতেছে। বিশেষতঃ য়ুরোপীয় সমাজচিত্রের ধ্যানে এই জ্ঞান বাড়িয়া উঠে বৈ হ্রাস হয় না। এক এক করিয়া, আমাদের বর্ত্তমান সমাজ-সংস্কারের মুখ্য প্রয়াসগুলিকে ধীরভাবে তাকাইয়া দেখিলেই, ইহা বুঝিতে পারা যায়। উপাধ্যায় এটা খুব ভাল করিয়া বুঝিয়াছিলেন বলিয়াই, এতটা সরাসরিভাবে সমাজসংস্কারের চেষ্টায় আপনিও প্রবৃত্ত হন নাই, অপরকেও এ কার্য্যে প্রোৎসাহিত করিতেন না।

 প্রচলিত সংস্কার-প্রয়াসিগণ আমাদের জাতিভেদ প্রথাটা ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য নিতান্ত ব্যগ্র হইয়াছেন। এ ব্যগ্রতা স্বাভাবিক। বর্ত্তমানে এই জাতিভেদ প্রথা যে আকার ধারণ করিয়াছে, তাহাতে সমাজের স্থবিরতা যে অনেকটা বাড়িয়া গিয়াছে, ইহা অস্বীকার করাও যায় না। আর পূর্ব্ব পূর্ব্ব যুগেও মহাজনেরা সময়ে সময়ে, এই বংশগত জাতিভেদপ্রথার সংস্কার সাধন যে করেন নাই, তাহাও নহে। জাতিভেদের কঠোর শাসন সত্ত্বেও বহুকালাবধি হিন্দুসমাজে যে বীজ-মিশ্রণ ঘটিয়া আসিয়াছে, ইহাও বোধ হয় প্রমাণ করা কঠিন নহে। এইরূপ বীজমিশ্রণে কেবল বিবিধ বর্ণসঙ্করেরই উৎপত্তি হয় নাই, যাঁরা সমাজে সঙ্করবর্ণ বলিয়া পরিচিত নহেন, তাঁহাদের মধ্যেও যে এরূপ বীজমিশ্রণ ঘটিয়াছে, ইহারও প্রমাণ-প্রতিষ্ঠা অসাধ্য নহে। এতদ্ব্যতীত বৈষ্ণব ও শাক্ত উভয় মার্গের সাধক ও সম্প্রদায়-প্রবর্ত্তকগণের মধ্যে কেহ কেহ প্রকাশ্যভাবেই এই জাতিভেদ প্রথাকে স্বল্পবিস্তর ভাঙ্গিয়া দিয়াছেন, ইহাও অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং বর্ত্তমানেও যে এ প্রথার সংস্কার প্রয়োজন নয়, অথবা সংস্কার হইবে না, এমন কথা কে বলিবে? উপাধ্যায় কখনও এমন