অনিষ্টকর প্রথা সম্বন্ধে তিনি যে অন্ধ ছিলেন, কিম্বা এ সকলের পরিবর্ত্তন ও সংশোধন ইচ্ছা করিতেন না,—এমন কথা কিছুতেই বলা যায় না।
অন্য প্রসঙ্গে যাহা বলিয়াছিলাম, উপাধ্যায়ের সমাজানুগত্য ও সমাজনীতি সম্বন্ধেও তাহাই বলিতে পারি। উপাধ্যায় স্বদেশী সমাজকে, লোকে দেবতার মন্দিরকে যে চক্ষে দেখে, সেই চক্ষে দেখিতেন। ভক্ত লোকেও প্রয়োজন হইলে আপনার দেবতার মন্দির ভাঙ্গিয়া থাকেন, কিন্তু ভাঙ্গিবার জন্য তাহা ভাঙ্গেন না, অন্য দেবতার প্রতিষ্ঠার জন্যও তাহাকে নষ্ট করেন না। আপনার দেবতার সেবার সৌকর্য্যার্থেই ভাঙ্গিয়া থাকেন এবং ভাঙ্গিবার সময়, শান্ত সমাহিত, শুদ্ধ বুদ্ধ হইয়া, ভক্তির সঙ্গেই ভাঙ্গেন। এরূপভাবে যদি কেহ হিন্দুসমাজের সংস্কারে প্রবৃত্ত হন, উপাধ্যায় তাঁহার সে চেষ্টাকে মাথায় করিয়া লইতেন, ইহা জানি। আর প্রচলিত সমাজ-সংস্কার-চেষ্টার মধ্যে এই সংযম, এই শ্রদ্ধা ও এই ভক্তির প্রতিষ্ঠা দেখিতে পান নাই বলিয়াই তিনি ইহার সমর্থন করিতে পারেন নাই। তিনি স্বদেশ-বস্তুকে কেবল ভালবাসিতেন যে তাহা নয়, আন্তরিক ভক্তিও করিতেন। তাঁর সমাজানুগত্যের মধ্যে ও সমাজনীতির মূলে এই অপূর্ব্ব স্বদেশভক্তিটী সর্ব্বদা জাগিয়া থাকিয়া, তাঁহার চরিত্রের এই বিশিষ্টতাকে ফুটাইয়া তুলিয়াছিল।