পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
চরিত-কথা

বরং প্রত্যক্ষভাবে তাহাকে প্রত্যাখ্যানই করিয়াছেন। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজের সমাজ-সংস্কারচেষ্টার পরোক্ষ প্রভাবেই যে আজ ভারতের, বিশেষতঃ বাঙ্গলা দেশের, হিন্দুসমাজ নানা দিকে উদার ও উন্নতিমুখী হইয়া উঠিতেছে, ইহাই বা অস্বীকার করা যায় কি?

 আর ব্রাহ্মসমাজ আমাদের বর্ত্তমান সমাজবিবর্ত্তনে একটা শূন্যতাকে পূর্ণ করিয়াই, আপাততঃ এরূপ নিষ্ফলতা লাভ করিয়াও ফলতঃ দেশের ধর্ম্মকর্ম্মের উপরে এতটা প্রভাব বিস্তার করিতে পারিয়াছেন। ব্রাহ্মধর্ম্ম যতই কেন বিদেশীয় ভাবাপন্ন হউক না, ইহা যে ভারতবর্ষের বিশাল হিন্দুসমাজের উপরে উড়িয়া আসিয়া জুড়িয়া বসে নাই, কিন্তু তাহার বর্ত্তমান সামাজিক বিবর্ত্তনের ধারাটীকে আশ্রয় করিয়া ভিতর হইতেই ফুটিয়া উঠিয়াছে, ইহা মানিতেই হইবে।

সমাজ বিবর্ত্তনের ক্রম

 এই সামাজিক বিবর্ত্তনের গতিটা সোজা নয়, কিন্তু বাঁকা। সে বাঁকাও একটু অদ্ভুত রকমের। ইংরেজিতে ইহাকে স্পাইর‍্যাল (spiral) বলে। আমাদের ভাষায় ইহার কোনও প্রতিশব্দ আছে বলিয়া মনে পড়ে না। কোনও সোজা খুঁটির গায়ে গোড়া হইতে আগা পর্য্যন্ত, খানিকটা করিয়া ব্যবধান রাখিয়া, যদি একখানা কাপড় বা একটা রজ্জু জড়াইয়া দেওয়া হয়, তবে এই কাপড়ের বা রজ্জুর গতি যেরূপ হইবে, সমাজ-বিবর্ত্তনের গতিও সেইরূপ। এইরূপ বক্রগতিকেই ইংরেজিতে স্পাইর‍্যাল-গতি বলে। এ গতি একটানা কেবল উপরের দিকে চলে না। একটু উপরে উঠিয়া আবার একটু নীচে নামিয়া আইসে। কিন্তু এইরূপে নিম্নাভিমুখী হইয়াও, আগে যতটা নীচে ছিল, কদাপি ততটা নীচে আর যায় না। বরং নীচে নামিতে যাইয়াও সর্ব্বদাই আগে যতটা উচ্চে ছিল, প্রত্যেক স্থানেই