পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৮
চরিত-কথা

আসিয়া উপস্থিত হয়। এই নূতন শক্তি-সংঘর্ষে এই তামসিকতা অল্পে অল্পে নষ্ট হইয়া অভিনব রাজসিকতা জাগিয়া উঠিতে আরম্ভ করে। এই বিচিত্র যুগসন্ধিকালে ব্রাহ্মসমাজের জন্ম হয়। য়ুরোপীয় সাধনার এই প্রবল রাজসিকতাকে আশ্রয় করিয়াই ব্রাহ্মসমাজ, ধর্ম্মে ও কর্ম্মে, সর্ব্ববিষয়ে স্বদেশী সমাজ যে ঘোরতর তামসিকতার দ্বারা আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল, প্রতিবাদী ধর্ম্মের প্রবল আঘাতে তাহাকে ভাঙ্গিতে আরম্ভ করিয়া, আধুনিক ভারতের বিবর্ত্তনগতিকে homageneity বা thesisএর অবস্থা হইতে differentiation বা antethesisএর অবস্থায় লইয়া যান। আর তিন জন প্রতিভাশালী পুরুষকে আশ্রয় করিয়া ব্রাহ্মসমাজ আধুনিক ভারতবর্ষের ধর্ম্ম ও কর্ম্মকে ঘোরতর তামসিকতা হইতে মুক্ত করিয়া, তাহার মধ্যে অভিনব রাজসিকতার সঞ্চার করিয়াছেন। প্রথম—মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর; দ্বিতীয়—ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন; তৃতীয়—পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী।

রাজর্ষি রামমোহন ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ

 রাজা রামমোহন রায়কেই লোকে ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা বলিয়া গ্রহণ করে সত্য; কিন্তু তিনি যে ভাবে ব্রাহ্মসমাজকে গড়িয়া তুলিতে চাহিয়াছিলেন, আর ব্রাহ্মসমাজে তাঁর পরবর্ত্তী নেতৃবর্গ যে ভাবে ইহাকে গড়িয়া তুলিয়াছেন, তাহার মধ্যে আকাশ পাতাল প্রভেদ দাঁড়াইয়া গিয়াছে। রাজা একান্তভাবে শাস্ত্র প্রামাণ্য বর্জ্জন করেন নাই। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ বেদকে প্রামাণ্যমর্য্যাদাভ্রষ্ট করিয়া শুদ্ধ ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধির উপরেই ঐকান্তিকভাবে সত্যাসত্য ও ধর্ম্মাধর্ম্ম-মীমাংসার ভার অর্পণ করেন। রাজা ধর্ম্মসাধনে যে গুরুরও একটা বিশেষ স্থান আছে, ইহা কখনও অস্বীকার করেন নাই। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ, যেমন শাস্ত্র সেইরূপ