গুরুকেও বর্জ্জন করিয়া, প্রত্যক্ষ আত্মশক্তি ও অপ্রত্যক্ষ ব্রহ্মকৃপার উপরেই সাধনে যথাযোগ্য সিদ্ধিলাভের সম্ভাবনাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। রাজা কি তত্ত্বাঙ্গে, কি সাধনাঙ্গে, ধর্ম্মের কোনও অঙ্গেই, স্বদেশের সনাতন সাধনার সঙ্গে আপনার ধর্ম্মসংস্কারের প্রাণগত যোগ নষ্ট করেন নাই। মহর্ষি একপ্রকারের স্বাদেশিকতার একান্ত অনুরাগী হইয়াও প্রকৃতপক্ষে এই যোগ রক্ষা করেন নাই এবং করিতে চেষ্টাও করেন নাই। রাজা বেদান্তের উপরেই আপনার তত্ত্বসিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করেন। মহর্ষি প্রকৃতপক্ষে অষ্টাদশখৃষ্টশতাব্দীর য়ুরোপীয় যুক্তিবাদের উপরেই তাঁহার ব্রাহ্মধর্ম্মকে গড়িয়া তুলেন। রাজা বেদান্ত-প্রতিপাদ্য ধর্ম্মকেই ব্রাহ্মধর্ম্ম বলিয়া প্রচার করেন। মহর্ষি তাঁহার আপনার আত্মপ্রত্যয় বা স্বানুভূতি প্রতিপাদ্য ধর্ম্মকেই ব্রাহ্মধর্ম্ম বলিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন। রাজা বৈদান্তিক হইলেও তাঁর পূর্ব্বতন কোনও বৈদান্তিক সিদ্ধান্তকেই একান্তভাবে সত্য বলিয়া গ্রহণ করেন নাই। কিন্তু শাস্ত্রাবলম্বনে যে সকল যুক্তিপ্রমাণাদিকে আশ্রয় করিয়া, পূর্ব্বতন ঋষি ও মনীষিগণ আপন আপন সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, রাজা রামমোহন সেই প্রাচীন ঋষিপন্থার অনুসরণ করিয়াই, আধুনিক সময়ের উপযোগী এক সমীচিন বেদান্তসিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করিতে চেষ্টা করেন। ইহাতে স্বদেশের ধর্ম্মের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকিয়া যায়, অথচ পুরাতনের উপরেই, পুরাতনের সঙ্গে যুক্ত হইয়া, পুরাতনের শিক্ষা ও সাধনাকে সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করিয়াই—দেশকালের উপযোগী নূতন সিদ্ধান্তেরও প্রতিষ্ঠা হয়। মহর্ষিও পুরাতনকে কতকটা রক্ষা করিতে চাহিয়াছেন বটে, কিন্তু সে কেবল তাঁর অভিজাত প্রকৃতির বলবতী রক্ষণশীলতার অনুরোধে। তিনি যে সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করেন, তাহার সঙ্গে তাঁর এই চেষ্টার কোনই অপরিহার্য্য সম্বন্ধ ছিল না। মহর্ষির ব্রাহ্মধর্ম্মগ্রন্থে কেবল উপনিষদের উপদেশই উদ্ধৃত ও ব্যাখ্যাত হইয়াছে
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৫৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী ও ব্রাহ্মসমাজ
১৪৯