আর যে বিচার বা criticismকে অবলম্বন করিয়া দেশের ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রাণে এই সন্দেহের উৎপত্তি হয়, সেই বিচার বা criticismকে আশ্রয় করিয়াই মহর্ষির ধর্ম্মমীমাংসার এবং তত্ত্ব-সিদ্ধান্তেরও প্রতিষ্ঠা হয়! এই বিচার বা criticismএর উপরেই অষ্টাদশ ও উনবিংশ খৃষ্ট-শতাব্দীর য়ুরোপীয় যুক্তিবাদেরও প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল। এই যুক্তিবাদ আগমের বা আপ্তবাক্যের প্রামাণ্য স্বীকার করে না। এই যুক্তিবাদের বিচারপদ্ধতি প্রাকৃত বুদ্ধির আশ্রয়ে, লৌকিক ন্যায়ের বা formal logic এর উপরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং এই য়ুরোপীয় যুক্তিবাদের প্রভাবে, আমাদের তদানীন্তন ইংরেজি-শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বিচার বা criticism ও শাস্ত্রাশ্রয় বর্জ্জন এবং সদ্গুরুর শিক্ষা ও সাহায্যকে উপেক্ষা করিয়া, লৌকিক ন্যায়ের প্রত্যক্ষ ও অনুমানাদি প্রমাণকেই অবলম্বন করিয়া চলিতে আরম্ভ করে। এই বিচার একান্তই প্রত্যক্ষবাদী। আর প্রত্যক্ষ বলিতে ইহা কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষই বুঝিয়া থাকে। এই যুক্তিবাদের বা Rationalism এর সঙ্গে জড়বাদের বা Materialismএর সম্বন্ধ অতিশয় ঘনিষ্ঠ। এইজন্য য়ুরোপে যখনই যেখানে যুক্তিবাদ প্রবল হইয়া উঠিয়াছে, তখনই সেখানে তার সঙ্গে সঙ্গে, এই জড়বাদ বা Materialisne প্রবল হইয়াছে। য়ুরোপীয় যুক্তিবাদ ও জড়বাদ উভয়ই “নান্যদস্তীতিবাদী।” এই যুক্তিবাদের উপরে ধর্ম্মবস্তুকে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইলে, মানুষের প্রত্যক্ষ চক্ষু কর্ণাদির ন্যায়, অপ্রত্যক্ষ অথচ বুদ্ধিগম্য, একটা অতীন্দ্রিয় বৃত্তির অস্তিত্ব মানিয়া লইতে হয়। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ খৃষ্টশতাব্দীর য়ুরোপীয় আস্তিক-মতাবলম্বী ধর্ম্মসংস্কারকেরা তাহাই করিয়াছেন। তাঁরা মানুষের মধ্যে ধর্ম্মবুদ্ধি বা religious sense বলিয়া একটা অতীন্দ্রিয় বৃত্তির প্রতিষ্ঠা করিয়া, তাহারই উপরে ধর্ম্মের প্রামাণ্যকে গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করেন। এই ধর্ম্মবুদ্ধি বা religious sense
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/১৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
চরিত-কথা