সভ্য অসভ্য সকল মানুষেরই মধ্যে আছে। ইহা সার্ব্বজনীন ও সার্ব্বভৌমিক। সুতরাং কোনও বাহ্য কারণের বা অবস্থার যোগাযোগে ইহার উৎপত্তি হয় না বলিয়া, এই ধর্ম্মবুদ্ধিটা সত্য। আর ইহার একটা স্বতঃপ্রামাণ্যও আছে। এই ভাবেই য়ুরোপীয় যুক্তিবাদ ধর্ম্মকে বাঁচাইয়া রাখিতে চেষ্টা করিয়াছে। মহর্ষিও ব্রাহ্মধর্ম্মকে রক্ষা করিতে যাইয়া কতকটা এই পথ ধরিয়াই চলিয়াছিলেন। য়ুরোপীয় যুক্তিবাদী আস্তিকসম্প্রদায় যাহাকে ধর্ম্মবুদ্ধি বা religious sense বলিয়াছেন, মহর্ষি আপনার ধর্ম্মমীমাংসায় তাহাকেই আত্মপ্রত্যয় নামে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই আত্মপ্রত্যয় বস্তুতঃ আমাদের শাস্ত্রোক্ত স্বানুভূতিরই নামান্তর মাত্র। বেদান্ত যাহাকে আত্মপ্রত্যয় বলিয়াছেন, মহর্ষির আত্মপ্রতায় ঠিক সেই বস্তু নয়। অন্ততঃ তাঁহার প্রথম জীবনের ধর্ম্মমীমাংসা যাহাকে আত্মপ্রত্যয় বলিয়া ধরিয়াছিল, তাহা যে বেদান্তোক্ত আত্মপ্রত্যয়, এমন সিদ্ধান্ত করা যায় না। আর শাস্ত্র-গুরু বর্জ্জন করিয়া শুদ্ধ যুক্তিমার্গ অবলম্বন করিলে এই তথাকথিত আত্মপ্রত্যয় বা স্বানুভূতিই সত্যের ও প্রামাণ্যের একমাত্র আশ্রয় হইয়া দাঁড়ায়। মহর্ষিও এই স্বানুভূতিকে অবলম্বন করিয়াই, ব্রাহ্মধর্ম্মকে পুনরায় জাগাইয়া তুলেন।
এদেশে তখন এরূপভাবে লোকের স্বানুভূতিকে জাগাইয়া তোলা অত্যন্ত আবশ্যক ছিল। কেবল শাস্ত্রাবলম্বনে ধর্ম্মসাধন করিবে না, শাস্ত্রযুক্তি মিলাইয়া ধর্ম্মপ্রতিষ্ঠা করিবে,—লোকে এই প্রাচীন ও সমীচিন উপদেশ তখন একেবারেই ভুলিয়া গিয়াছিল। শাস্ত্রজ্ঞানও একরূপ লোপ পাইয়াছিল। তাহা না হইলে মহর্ষি যেভাবে চারিজন ব্রাহ্মণকে কাশীতে বেদ পড়িবার জন্য পাঠাইয়া, তাঁহাদের সাক্ষ্যে বেদের প্রামাণ্য-মর্য্যাদা নষ্ট করেন, তাহা আদৌ সম্ভব হইত না। ইঁহারা কেবল ব্যাকরণের সাহায্যে বেদার্থ নির্ণয় করিতে গিয়াছিলেন, প্রাচীন মীমাংসার পথ অবলম্বন