উপরে বসিয়া ছিলেন। শয্যার নিকটেই একটা ফরাশ পাতা ছিল। নমঃশূদ্রটা অশ্বিনীকুমারের প্রকোষ্ঠের দ্বারদেশে যাইয়া তাঁহাকে নমস্কার করিলেন; অশ্বিনীকুমারও অমনি দাঁড়াইয়। অভ্যাগতকে প্রতিনমস্কার করিলেন এবং সেই প্রকোষ্ঠের ভিতরে তাঁহাকে ডাকিয়া তাঁহার পরিচয় লইয়া তাহার সঙ্গে যাইয়া সেই ফরাশে বসিলেন। তার পর অশ্বিনীকুমার তাঁহার প্রয়োজন জানিতে চাহিলে নমঃশূদ্রটী বলিলেন—“বাবু, আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করিতে আসিয়াছিলাম, কিন্তু তাহা জিজ্ঞাসা করা এখন অনাবশ্যক; আমার প্রশ্নের উত্তর আমি পাইয়াছি। আপনি যখন আমাকে লইয়া এক বিছানায় বসিয়া কথা কহিয়াছেন তাহাতেই, বুঝিয়াছি, 'বন্দে মাতরম্' সত্য এবং আমরা আপনাদের ভাই।” ঘটনাটী অতি ক্ষুদ্র, কিন্তু ইহাতে কি সহজ, কি সামান্য ও স্বাভাবিক উপায়ে অশ্বিনীকুমার বরিশালে সর্ব্বসাধারণের চিত্তের উপরে আপনার এই অনন্যপ্রতিদ্বন্দ্বী সাম্রাজ্য বিস্তার করিয়াছেন ইহা বুঝিতে পারা যায়।
সে কালের অধিকাংশ ইংরেজি-শিক্ষিত বাঙ্গালীর মতন প্রথম যৌবনে অশ্বিনীকুমারও ব্রাহ্মসমাজের চিন্তা ও আদর্শের দ্বারা স্বল্পবিস্তর অভিভূত হইয়াছিলেন। এমন কি এক সময়ে তাঁর যৌবন-বন্ধুরা ভাবিয়াছিলেন যে বুঝিবা অশ্বিনীকুমার প্রকাশ্যভাবেই ব্রাহ্মসমাজভুক্ত হইয়া পড়েন। কিন্তু ব্রাহ্মসমাজের যুক্তিবাদ এবং ধর্ম্মের আদর্শকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করিয়াও অশ্বিনীকুমার তাহার সমাজ-দ্রোহিতার সঙ্গে প্রাণ খুলিয়া যোগদান করিতে পারেন নাই। এই জন্যই দেশে ফিরিয়া, পিতার আদেশে, খাঁটি হিন্দু পদ্ধতি অনুসারে বিবাহ করিয়া, গার্হস্থ্যাশ্রমে প্রবেশ করিলেন। আমি যতদূর জানি মত ও বিশ্বাসে অশ্বিনীকুমার এখনও অনেকটা ব্রাহ্মভাবাপন্নই হইয়া আছেন; কিন্তু এ সত্ত্বেও বোধ হয় এ পর্য্যন্ত প্রচলিত