পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
চরিত-কথা

হিন্দুসমাজের নিতান্ত বিরোধী কোনও আচার ব্যবহারে লিপ্ত হন নাই। খাদ্যাখাদ্য ও আচার-বিচার সম্বন্ধে তিনি চিরদিনই উদার হিন্দুর মতন জীবন যাপন করিয়া আসিয়াছেন। অশ্বিনীকুমারকে যাঁরা পছন্দ করেন না, তাঁরা ইহাকে তাঁর কাপুরুষতার লক্ষণ বলিয়া প্রচার করেন। তাঁর বন্ধুরা বলেন, অশ্বিনীকুমার নিতান্ত সত্যবাদী ও ধর্মভীরু বলিয়াই সমাজবিধি মানিয়া চলেন। আমার মনে হয় যে, যে উপাদানে দ্রোহি-চরিত্র রচিত হয়, অশ্বিনীকুমারের মধ্যে সে বস্তু কোনও দিনই বেশী ছিল না। থাকিলে তিনি যেমনটী হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছেন ও যে কাজটী করিয়াছেন, তাহা করিতে পারিতেন বলিয়াও বোধ হয় না।

 একটা ছবির মধ্যে যেমন আলো ও ছায়ার যথাযোগ্য সমাবেশেই তার সৌন্দর্য্য ফুটিয়া উঠে, মানুষের চরিত্রেও সেইরূপ ভালমন্দ মিশিয়া, তার বিশিষ্টতাকে গড়িয়া তোলে। অশ্বিনীকুমারের মধ্যে যে কিছু দুর্ব্বলতা লোকে লক্ষ্য করে, তাহার সঙ্গেই তাঁর চরিত্রের অনন্যসাধারণ শক্তিও অতি ঘনিষ্ঠ, অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশিয়া আছে। এক্ষেত্রে মন্দটুকুকে ছাটিয়া ভালটুকু রাখা সম্ভব হয় না। দ্রোহিতা মাত্রেই প্রবল রাজসিকতার ফল। সমাজ-সংস্কারকেরা সকলেই রাজসিক স্বভাবের লোক। এমন কি, পুরাতনকে ভাঙ্গিয়া চুরিয়া যে সকল যুগপ্রবর্ত্তক মহাপুরুষ বা অবতার নব নব যুগধর্ম্মের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেন, তাঁদের সকলকেই স্বকার্য্যসাধনের জন্য এই রজোধর্ম্মের আশ্রয় গ্রহণ করিতে হয়। এই জন্য আমাদের দেশের যুগাবতার মাত্রেই ক্ষত্রিয় ছিলেন। এক পরশুরামকেই ব্রাহ্মণ দেখিতে পাই, কিন্তু পরশুরামও ব্রাহ্মণকুলেই কেবল জন্মিয়াছিলেন, ব্রাহ্মণ্যধর্ম পালন করেন নাই; জন্মে ব্রাহ্মণ হইয়াও কর্ম্মে-সর্ব্বতোভাবেই তিনি ক্ষত্রিয় হইয়াছিলেন। এই রাজসিকতা হইতেই সর্ব্বপ্রকারের আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রেরণা আইসে। আর সংস্কার, বিদ্রোহ, সকলই এই