পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭২
চরিত কথা

রাষ্ট্রবন্ধন উভয়ই অত্যন্ত শিথিল হইয়া, আধুনিক সভ্যতা ও সাধনার মূল ভিত্তিকে পর্য্যন্ত বিধ্বস্ত করিবার উপক্রম করিয়াছে। অশ্বিনীকুমার বয়োবৃদ্ধি সহকারে এই যুক্তিবাদের অপূর্ণতা প্রত্যক্ষ করিয়া সদ্‌গুরুর আশ্রয়লাভ করেন। আর তদবধি তাঁর ধর্ম্মজীবন ও কর্মজীবন উভয়ই এক অভিনব পথ ধরিয়া ফুটিয়া উঠিতে আরম্ভ করে।

 এই সদ্‌গুরু তত্ত্বটী যে কি ইহা এখনও আমাদের নব্য শিক্ষিত সমাজ ভাল করিয়া ধরিতে পারেন নাই। গতানুগতিক পন্থা অবলম্বনে যাঁরা গুরুকরণ করিয়া এদেশে ধর্ম্মসাধন করেন, তাঁরাও কেবল নিষ্ঠাগুণে কোনও কোনও স্থলে সাধনপথে বিশেষ অগ্রসর হইলেও, প্রকৃত গুরুতত্ত্ব যে কি ইহা কিছুই বুঝেন বলিয়া মনে হয় না। গুরুকরণ ও গুরুশক্তিকে তাঁরা একটা অতিলৌকিক ও অতিপ্রাকৃত ব্যাপার বলিয়াই মনে করেন, আর গুরুনির্ব্বাচনেও প্রায় কোনও প্রকারের বিচারবিবেচনা করেন না। অধিকাংশ লোকে কুলগুরুকেই সদ্‌গুরু বলিয়া মনে করেন, অপর কেহ কেহ বা কুলগুরু ত্যাগ করিয়া কোনও সাধুপুরুষের নিকটে দীক্ষা লইয়া, দীক্ষাগুরুকেই সদ্‌গুরু বলিয়া ভাবিয়া থাকেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কুলগুরু বা দীক্ষাগুরু এঁদের দু’এর কেহই সদ্‌গুরু নহেন। কুলগুরুতে আর সদ্‌গুরুতে যে প্রভেদ অনেক, একথা আজি কালি একটু আধটু ধর্ম্মচর্চ্চা যাঁরা করেন, তাঁরা সকলেই স্বল্পবিস্তর বুঝিয়া থাকেন। জন্মনিবন্ধন যে কেহ অপরের ধর্মপথের সহায় ও নায়ক হইতে পারে না, এই মোটা কথাটা এদিনে আর কাহাকেও বুঝাইতে হয় না। শিক্ষিত লোকেরা এখন আর কুলগুরু গ্রহণ করেন না; অধিকাংশ লোকে কোনও গুরুই গ্রহণ করেন না, যাঁরা করেন, তাঁরা কোনও সাধুসন্তের নিকটে মন্ত্রদীক্ষা লইয়া, ধর্মসাধন করিবার চেষ্টা করেন। দীক্ষাগুরু কুলগুরু অপেক্ষা অনেক শ্রেষ্ঠ হইলেও, কেবল ধর্ম্মসাধনেই তিনি