শিষ্যের সহায় হইতে পারেন মাত্র, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে অপ্রকট ও অব্যক্ত ভগবদ্বস্তুকে আত্মপ্রভাবে শিষ্যের অন্তরে প্রকট ও ব্যক্ত করিবার অধিকার তাঁরও নাই। দীক্ষাগুরু সাধক বা সিদ্ধপুরুষ পর্য্যন্ত হইতে পারেন; তিনি পথ দেখাইয়া দিতে পারেন, আপনার আধ্যাত্মিক শক্তিপ্রভাবে শিষ্যের চিত্তকে অধিকার করিয়া, তাঁহার অস্তরে সাধনের ও ভক্তির প্রেরণা পর্য্যস্ত প্রদান করিতে পারেন। কিন্তু সাধ্য—বস্তুকে প্রকাশ করিতে পারেন না। এটী কেবল সদ্গুরুরই কর্ম্ম। আর এই জন্যই সদ্গুরুকে লোকে ও শাস্ত্রে ভগবানের বিগ্রহ বলিয়া গ্রহণ করিয়া থাকে। কুলগুরু বা দীক্ষাগুরুর এই অধিকার নাই। এক অর্থে মানুষ মাত্রই মানুষের গুরু; আর কেবল মানুষই বা বলি কেন, পশুপক্ষীকীটপতঙ্গাদির নিকটও মানুষ কত শিক্ষালাভ করে বলিয়া তাহারাও গুরুপদবাচ্য। আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড—জড় জীব সকলেই এক অর্থে ভগবানের প্রকাশও বটে; সকলেই সেই অব্যক্তকে নিয়ত ব্যক্ত করিতেছে। সকলেই তাঁর অবতার। কিন্তু এইরূপ ব্যাপক ও সাধারণ অর্থে সদ্গুরুকে ভগবানের বিগ্রহ বলা যায় না। ঈশ্বর নিরাকার ও চৈতন্যস্বরূপ, তিনি আমাদের অন্তরে অন্তর্য্যামিরূপে রহিয়াছেন। তিনি পরমাত্মা, তিনি সর্ব্বাত্মা, তিনি বিশ্বাত্মা। কিন্তু জীব তাঁহাকে দেখে কৈ? সকল জ্ঞানকে যিনি উদ্বুদ্ধ করিতেছেন, জ্ঞান তাঁহাকে ধরিতে পারে না। পারে না এইজন্য যে তিনি জ্ঞানের মূলেই আছেন, জ্ঞানের বিষয়রূপে, জ্ঞেয়রূপে সকলের প্রত্যক্ষ হন না। ভগবান সদ্গুরুরূপেই জীবে সাক্ষাৎকার হইয়া থাকেন। যিনি অন্তর্য্যামী, তিনিই সদ্গুরু। ভাগবত ভগবানকেই আচার্য্য বলিয়াছেন— আচার্য্যকে মনুষ্যজ্ঞানে কখনও অসূয়া করিবে না। আর দ্বিবিধরূপ ধারণ করিয়া শ্রীভগবান জীবের সর্ব্বপ্রকারের অমঙ্গল নিরস্ত করিয়া, তাহার সদগতি করিয়া থাকেন। ইহার এক অন্তর্যামিরূপ,
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৭৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত অশ্বিনীকুমার দত্ত
৭৩