প্রশ্ন এই—-ভগবানকে আমরা জানিতে পারি, না জানিতে পারি না। কেবল অন্তর্য্যামিরূপে তাঁহাকে জানিলে, তাঁর আধখানা মাত্র জানা হয়। ফলতঃ বাহিরে তাঁর যে সকল প্রকাশ হয় ও হইতেছে, সেগুলিকে ছাড়িয়া, তাঁর অন্তর্য্যামিরূপেরও কোনও সত্য ও অর্থ প্রতিষ্ঠিত হয় না। অন্তরে আমাদের যে সদসদ্জ্ঞান বা ধর্ম্মবুদ্ধিকে তিনি জাগাইয়া দেন, তার সঙ্গে বাহিরের বিষয়-রাজ্যের ও সমাজ-জীবনের সম্বন্ধ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও অঙ্গাঙ্গী। আমাদের ধর্মাধর্ম্ম আমরা যে সমাজে বাস করি, বা যে সকল বিভিন্ন সমাজের সঙ্গে বিবিধ সম্বন্ধে আবদ্ধ হই, তারই আশ্রয়ে ফুটিয়া থাকে। বাহিরে যার প্রকাশ হয় না, ভিতরে তার জ্ঞান জাগে না, জাগিতে পারে না। ভগবানকে বাহিরে দেখিলে তবে ভিতরে তাঁর সত্য জ্ঞানলাভ করা সম্ভব হয়। এইজন্য ভগবানের শ্রেষ্ঠতম প্রকাশ যে সকল মহাপুরুষের মধ্যে হয়, তাঁহারাই জগতে সকল ধর্মের প্রত্যক্ষ আশ্রয় হইয়া রহেন। ইহাই অবতারের মূল অর্থ ও মুখা প্রয়োজন। ইহাই সদ্গুরুতত্ত্বেরও প্রতিষ্ঠা। যাঁহার মধ্যে শিষ্যের অন্তরের আত্মপ্রত্যয়নিহিত ভগবদ্বাদ ও ভগবদাদর্শ প্রকট হইয়া, তাহার ভক্তি ও আনুগত্যকে একান্তভাবে টানিয়া লয়, তিনিই প্রকৃতপক্ষে সদ্গুরুপদবাচ্য। তাঁহাকে দেখিয়াই শিষ্য ও সাধক, আপনার সাধ্যবস্তুর প্রত্যক্ষলাভ করেন। অবতারেরা যুগে যুগে প্রকাশিত হন, সদ্গুরুতে ভগবান নিত্য অবতীর্ণ। এই সদ্গুরুতত্ত্বেতেই স্বাধীনতা ও আনুগত্যের, স্বানুভূতি ও শাস্ত্রের, মত ও সত্যের, আত্মপ্রত্যয় ও বিষয়-প্রত্যক্ষের, সকল সমস্যার চূড়ান্ত মীমাংসা হইয়া থাকে। এখানেই সর্ব্বধর্ম্ম সমন্বয় হয়। অশ্বিনীকুমার প্রথম যৌবনের ব্যক্তিত্বাভিমানী যুক্তিবাদের অপূর্ণতা প্রত্যক্ষ করিয়া, সদ্গুরুচরণাশ্রয় পাইয়াই ক্রমে স্বাধীনতার সঙ্গে আনুগত্যের সমন্বয় পক্ষে অগ্রসর হইতে আরম্ভ করেন।
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৮০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রীযুক্ত অশ্বিনীকুমার দত্ত
৭৫