অশ্বিনীকুমার এই উদার ও গভীর গুরুতত্ত্ব বুঝিয়া, পরে গুরুকরণ করিয়াছিলেন, ইহা মনে হয় না। দীক্ষা গ্রহণের পূর্ব্বে অতি অল্পলোকেই এই তত্ত্বের মর্ম্ম বুঝিতে পারেন। বিশেষতঃ আমরা আজি কালি যেরূপ শিক্ষাদীক্ষা পাইয়া থাকি, তাহাতে এই গভীর তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করা কিছুতেই সহজ নহে। এই তত্ত্ব গুরুগ্রহণের পরে, গুরুকৃপাতেই কেবল, ক্রমে ক্রমে শিষ্যের প্রাণে ফুটিয়া উঠে। একালে অধিকাংশ শিক্ষিত লোকই সাধু মহাপুরুষবিশেষের উন্নত ও উদার চরিত্রে মুগ্ধ হইয়াই তাঁদের শরণাপন্ন হন। অশ্বিনীকুমারও, বোধ হয়, এই ভাবেই, তাঁর গুরুদেবের চরণে যাইয়া প্রথমে উপস্থিত হন। একদিকে তাঁর সহজ ধর্ম্মপিপাসা মামুলী ব্রাহ্মধর্ম্মের রূপকোপাসনা ও মানস-কল্পিত সাধনভজনে মিটাইতে পারে নাই। অন্যদিকে মামুলী ব্রাহ্ম-সিদ্ধান্তের যুক্তিবাদ সত্যের সম্যক্ প্রামাণ্যও প্রতিষ্ঠা করিতে পারে নাই। ইহাতে জ্ঞান ও ভাব, দু’এর কিছুই পরিপূর্ণ তৃপ্তিলাভ করিতে পারে নাই। আর এই দ্বিবিধ অভাব পরিপূরণের আশাতেই, বোধ হয়, অশ্বিনীকুমার গুরুগ্রহণ করেন। প্রথম যৌবনে, ইংরেজি শিক্ষার ও য়ুরোপীয় যুক্তিবাদের বা র্যাশনিলিজ্মের (Rationalism) প্রভাবে যাঁরা ব্রাহ্মসমাজের আশ্রয়ে আসিয়া, পরে গুরুদীক্ষাগ্রহণ করিয়াছেন, তাঁদের প্রায় সকলের ভিতরকার কথাই ইহা। অশ্বিনীকুমারের অন্তর্জীবনের কাহিনী যে অন্যরূপ এরূপ অনুমানের কোনও হেতু আছে বলিয়া বোধ হয় না। আর এই পথে আসিয়া গুরুগ্রহণ করিয়াছেন বলিয়া, অশ্বিনীকুমার একেবারেই যে আমাদের দেশের প্রাচীন গুরুতত্ত্বটী পূর্ণমাত্রায় বুঝিয়াছিলেন, এমন 'কল্পনা করা কঠিন।
সদ্গুরুতত্ত্ব সম্যকরূপে হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলে, গুরুর চরণে একান্ত আত্মসমর্পণ অনিবার্য্য হইয়া উঠে। যিনি অন্তর্য্যামী, তিনিই