সংসারের লৌকিক ভালমন্দের বাহ্য বিচার-বিধানের প্রয়োগ চলে না। লৌকিক বিচারে যাহা নিতান্ত মন্দ, তার ভিতর দিয়াও নিয়তই ত মামুষের জীবনে কত অদ্যূত ভাল ফুটিয়া উঠে। গুরুতত্ত্ব যারা মানেন না, তাঁরাও ত এই কথাটা অস্বীকার করেন না। মানুষ মন্দ করে, পাপ করে, অশেষবিধ অহিতাচারে নিযুক্ত হয়, অথচ ভগবান তাহাকে সেই মন্দের, সেই অহিতের, সেই পাপের ভিতর দিয়াই, অপূর্ব্ব কৌশলে, অযাচিত করুণাগুণে, তাহাকে কল্যাণের ও পুণ্যের পথে লইয়া গিয়া দাঁড় করান, একথা সকলেই কহেন। হয় বলিতে হয় যে এ সকল স্থলে ভগবানের বিশেষ বিধান সার্ব্বজনীন কার্যকারণসম্বন্ধকে বাতিল করিয়া, পাপীয় মুক্তির ব্যবস্থা করিয়া দেয়, না হয়, ঐ মন্দের মধ্যেই এই ভালর, ঐ পাপের ভিতরেই এই পুণ্যের বীজ লুকাইয়া ছিল, ইহা স্বীকার করিতে হয়। পাপ পাপই প্রসব করে; পুণ্য হইতে পুণ্যই উৎপন্ন হয়। যুক্তি ও নীতি এই কথাই বলে। আর ইহাই যদি এ ক্ষেত্রে শেষ কথা হয়, তাহা হইলে খৃষ্টীয়ানী অনন্তনরকবাস, কিম্বা বৌদ্ধ কর্ম্মবাদ, ভিন্ন, আর কোনও কিছুর প্রতিষ্ঠা হয় না। আর নরকবাদ এবং কর্ম্মবাদ উভয়ই ভাগবতী করুণাকে সঙ্কুচিত ও অসমর্থ করিয়া রাখে। যাঁরা ভগবানের করুণায় বিশ্বাস করেন, তাঁরা মন্দের ভিতর দিয়াই ভাল, অকল্যাণের ভিতর দিয়াই কল্যাণ, পাপের ভিতর দিয়াই পুণ্যের প্রকাশ হয়, এই কথা সর্ব্বদাই মানিয়া লন। আর এই সত্যকে প্রামাণ্য সিদ্ধান্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত করিতে গেলেই, আমাদের ভালমন্দ সকল প্রেরণাই অন্তর্য্যামী পুরুষ হইতে আসে, ইহা স্বীকার করিতেই হয়। ফলতঃ পারমার্থিক দৃষ্টিতে ভালমন্দের ভেদাভেদ থাকিতেই পারে না। সে দৃষ্টি সমদৃষ্টি। সে ভাব দ্বন্দ্বাতীত। আর সুখদুঃখ যেমন দ্বন্দ্ব, ভালমন্দ, পাপপুণ্য, এগুলিও সেইরূপ দ্বন্দ্ব। সম্যক্দৃষ্টির নিকটে সুখ আর দুঃখ দুই’ একই
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৮৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
চরিত-কথা