অদ্ভুত মিশ্রণে আমাদের চরিত্র গড়িয়া উঠিয়াছে। অশ্বিনীকুমারের মধ্যে এই দুইটী ভাবই পাশাপাশি দেখিতে পাওয়া যায়। আর এই কারণেই সময় সময় তাঁর আচার-আচরণে দুর্ব্বলতা ও অসামঞ্জস্য ফুটিয়া উঠে।
অশ্বিনীকুমারের মৌলিক উদ্ভাবনী শক্তি নাই। কোন একটা সর্ব্বাঙ্গসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গড়িয়া তুলিবার ক্ষমতাও তাঁহার নাই। সেই জন্মই এ পর্য্যন্ত তিনি তাঁহার চরিত্রের এই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবের একটা যথাযথ সঙ্গতি ও সমন্বয় সাধন করিতে পারেন নাই। পাশ্চাত্যের দিক্ দিয়া তিনি এ পর্যন্ত প্রাচ্যকে দেখেন নাই, বা প্রাচ্যের দৃষ্টি দিয়া পাশ্চাত্যকে বুঝিতে চেষ্টা করেন নাই। ফলে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবের বিশিষ্ট প্রভাবই তাঁহার চরিত্রে পরিলক্ষিত হয়। বিদ্যামন্দিরে, যুবকবৃন্দের শিক্ষাগুরুরূপে, প্রচারকরূপে, শাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনসাধারণের স্বত্বাধিকারের রক্ষিরূপে তাঁহার চরিত্রে আমরা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব দেখিতে পাই। অপরপক্ষে, বিশেষতঃ অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে ভগবানের নাম সংকীর্তনে, ভাগবতাবৃত্তিতে, এবং ভক্তিযোগ বা কর্ম্মযোগের ব্যাখ্যানে—তাঁর চরিত্রে প্রাচ্য ভাবই বেশী ফুটিয়া উঠে।
আর এই হিন্দুভাব লইয়াই আজ অশ্বিনীকুমার অনন্যলভ্য লোকনায়কের আসনে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেন। তিনি কেবলমাত্র একজন লোকশিক্ষক এবং আধুনিক জন-নায়ক হইলে তাঁহার প্রতিপত্তি ইংরেজিশিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যেই আবদ্ধ থাকিত। সে হিসাবেও তাঁর ভক্ত সংখ্যা কম নহে। পরন্তু, আমার বোধ হয় পশ্চিমবঙ্গে—যশোহর হইতে সূদূর শ্রীহট্ট পর্যন্ত—নবাশিক্ষিত যুবকসমাজে তাঁহার অন্যপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রভাব প্রতিষ্ঠিত আছে। পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন জেলা হইতে দলে দলে ছাত্র আসিয়া তাঁহার বরিশালস্থ কলেজে, তাহাদের জীবনের উৎকৃষ্ট অংশটুকু অতিবাহিত করিয়া গিয়াছে। তাঁহার সংস্পর্শে আসিয়া তাঁহার চরিত্রের