জাতিভেদ প্রথার গ্রন্থি শিথিল করিয়াছেন। তাঁহার শিক্ষার ফলে, কলেরা বা অন্য মহামারীর প্রকোপের সময়, তাঁহার বিদ্যালয়ের ছাত্রবৃন্দ, উচ্চনীচ জাতিনির্বিচারে, পীড়িতের সেবা শুশ্রূষার ভার গ্রহণ করিয়া থাকে। হতভাগিনী পতিতারাও তাহাদের সে সেবা হইতে বঞ্চিত হয় না। এমন অনেক স্থলে দেখিয়াছি, কুলীন ব্রাহ্মণ সন্তানেরা, বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা সঙ্কোচ না করিয়া, স্বহস্তে নীচজাতীয় রোগীর বিছানাদি, মলমূত্রাদি পর্য্যন্ত, পরিষ্কার করিয়াছে। এমন কি সময়ে সময়ে, লোকাভাব ঘটিলে, অস্পৃশ্য চণ্ডালাদির মৃতদেহও আপন স্কন্ধে বহিয়া সৎকার করিয়া আসিয়াছে। দুর্ভিক্ষ এবং মন্বন্তরের সময়, হিন্দু ও মুসলমান দুঃস্থ ব্যক্তিগণ তুল্যভাবে অশ্বিনীকুমারের সেবা পাইয়া আসিয়াছে। বহুবৎসরের নিঃস্বার্থ সামাজিক সেবাই জনসাধারণের হৃদয়-মন্দিরে তাঁহার জন্য এক অক্ষয় স্বর্ণ-সিংহাসনের প্রতিষ্ঠা করিয়াছে। তাহাদের কাছে তিনি একজন প্রসিদ্ধ বাগ্মী, ম্যাজিষ্ট্রেটের সহচর বা কমিশনের বিশ্বস্ত বন্ধু নহেন; তাহারা তাঁহাকে তাহাদেরই একজন অন্তরঙ্গ বন্ধু, দুর্দ্দিনের সহায়, এবং দুঃখে কষ্টে একাত্ত প্রিয়জন বলিয়াই জানে। অগাধ অর্থ দিয়া নহে, বাগ্মিত্বের মোহিনী শক্তি বলেও নহে, জ্ঞানগরিমার প্রভাবেও নহে, কিন্তু জনসাধারণের সহিত চিন্তায়, ভাবে ও কার্য্যে সম্পূর্ণ এক হইয়া যাওয়াই যথার্থ জননায়কের বিশেষত্ব। আমরা এদেশে অধুনা একমাত্র অশ্বিনীকুমারে এই লোকনেতৃত্বের কতকটা আভাস পাই। তত্রাচ, এ ভাব এ দেশে নুতন নহে, ইহা বহু পুরাতন। দেশ-কাল-পাত্রোচিতভাবে কিঞ্চিৎ পরিবর্ত্তিত হইয়া নূতন ভাবে ফুটিয়া উঠিতেছে—এই মাত্র!
পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৯৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
চরিত-কথা