পাতা:চরিত-কথা - বিপিনচন্দ্র পাল (১৯১৬).pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ্রীযুক্ত গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঙ্গলার ইতিহাসে গুরুদাস বাবুর স্থান

বাঙ্গলা দেশের ভবিষ্যৎ ইতিহাসে গুরুদাস বাবুর নাম থাকিবে কি না, জানি না। না থাকাই সম্ভব। ইতিহাস সচরাচর যে সকল বস্তুর স্মৃতিকে সযত্নে রক্ষা করে, গুরুদাস বাবুতে সে বস্তু বেশি নাই। যাহা অলোকসামান্য, ইতিহাস কেবল তাহাকেই স্মরণীর করিয়া রাখে। গুরুদাস বাবুর এরূপ অলোকসামান্য কোনো কিছু নাই। তাঁর অনেক বিদ্যা আছে, কিন্তু অনন্যসাধারণ বিশেষজ্ঞতা নাই। শ্রেষ্ঠ মেধা আছে, কিন্তু অলৌকিক প্রতিভা নাই। গুরুদাস বাবু কর্ম্মী; আর তাঁর কর্ম্ম সর্ব্বদাই ধর্ম্ম ও নীতি, শাস্ত্র ও লোকাচারের সম্মান করিয়া চলে। এই জন্য যাঁহারা সচরাচর এ সংসারে কলহ-কোলাহল—মুখর কর্ম্মজাল বিস্তার করিয়া, সস্তায় একটা ঐতিহ্য-কীর্ত্তি অর্জন করে, গুরুদাস বাবু সে জাতীয় কর্ম্ম—নায়ক নহেন। তথাপি দেশের লোকে তাঁহাকে গভীর শ্রদ্ধা করে; এতটা শ্রদ্ধা বাঙ্গলাদেশের সকল শ্রেণী ও সকল সম্প্রদায়ের লোকের প্রাণ হইতে, আর কাহারো প্রতি অর্পিত হইতেছে কি না, সন্দেহ। দেশের লোকে তাঁহার বিদ্যার সম্বর্দ্ধনা করে; তাঁহার বিনয়-সৌজন্যের সমাদর করে; তাঁহার বাহ্যাড়ম্বরশূন্য ধর্ম্মনিষ্ঠার ও আত্মনিষ্ঠার পূজা করিয়া থাকে। সকল প্রকারের জন হিতকর কর্ম্মে তাঁহার নেতৃত্ব কামনা করে। সকল স্বাদেশিক সাধুঅনুষ্ঠানে তাঁহার সহানুভূতি ও সাহচর্য, তাঁর পরামর্শ ও আশীর্ব্বাদ ভিক্ষা করে। কিন্তু তিনি যে তাহাদের চিন্তা ও ভাব, আশা ও আদর্শকে ফুটাইয়া তুলিয়া, অতি ঘনিষ্ঠভাবে তাহাদের অন্তর্জ্জীবনের সঙ্গে জড়িত হইয়া আছেন, এমনটা কখনো অনুভব করে না। আর এ জগতে যাঁহায়া,