চাহে। যে সকল শক্তির সমবায়ে বা সংঘর্ষণে সমাজ-জীবন বিবর্ত্তিত হয়, ইতিহাস তাহাকেই ভাল করিয়া লক্ষ্য করে। আর সমাজ-বিবর্ত্তনে ভাল ও মন্দ দুই মিশিয়া থাকে। আলো ও ছায়ার সমাবেশ ব্যতিরেকে যেমন কোনো তৈলচিত্র ফুটিয়া উঠে না; যেইরূপ ভাল ও মন্দের সংঘর্ষ ব্যতীত সমাজজীবনও গড়িয়া উঠিতে পারে না। ভাল ও মন্দের মধ্যে যে স্বাভাবিক বিরোধ আছে, তাহারই দ্বারা, সেই বিরোধের ফলস্বরূপই, জনসমাজ বিবর্ত্তিত হইতেছে। এই দেবাসুর-সংগ্রাম মানব-সমাজের নিত্য ধর্ম্ম। আর তারই জন্য, এই মানব-সমাজের বিবর্ত্তনের যথাযথ বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া রাখা যে ইতিহাসের কর্ম্ম, সেই ইতিহাস লোকে যাহাকে ভাল বলে কেবল তাহাকেই স্মরণীয় করিয়া রাখে না; কিন্তু ভাল হউক, মন্দ হউক, যাহা কিছু শক্তিশালী, যাহা কিছু অনন্যসাধারণ, যাহা কিছু গতির কারণ, ইতিহাস সর্ব্বদা তাহাকেই নিরপেক্ষভাবে ধরিয়া রাখিতে চাহে।
ঐতিহাসিক বিবর্ত্তনের প্রণালী
আর অলোকসামান্য প্রতিভাই সচরাচর জনমণ্ডলীর প্রাণে নূতন জ্ঞান, নূতন ভাব, নুতন আদর্শ, নূতন আশার সঞ্চার করিয়া, যুগে যুগে সমাজের এই গতিশক্তিকে প্রবুদ্ধ ও পরিচালিত করিয়া থাকে। এই সকল নূতন তাব ও আদর্শের প্রেরণায়, যাহা পূর্ব্বে পাওয়া যায় নাই, তারা পাইবার জন্য জনগণের চিত্ত চঞ্চল হইয়া উঠে। এই লোভ হইতে নূতন কর্ম্মের আয়োজন, এবং এই কর্ম্মচেষ্টা হইতেই সমাজের বিবর্ত্তন ও বিকাশ সাধিত হয়। অলোকসামান্য প্রতিভা সমাজের গতি-বেগ বুদ্ধি করে বলিয়াই ইতিহাসে তাহার এত গৌরব। কিন্তু জনসমাজের কল্যাণকল্পে যেমন তার গতি-শক্তির তেমনি তার স্থিতিশক্তিরও আবশ্যক। যেখানে সমাজের গতি-শক্তি তার সনাতন স্থিতি-শক্তিকে একান্তভাবে অভিভূত