পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগরচরিত 35 স্বপরিচ্ছন্ন এবং স্থসংষত করিয়া তাহাকে সহজ গতি এবং কাৰ্য্যকুশলতা দান করিয়াছেন—এখন তাহার স্বারা অনেক সেনাপতি ভাবপ্রকাশের কঠিন বাধাসকল পরাহত করিয়া সাহিত্যের নব নব ক্ষেত্র আবিষ্কার ও অধিকার করিয়া লইতে পারেন—কিন্তু যিনি এই সেনানীর রচনাকর্তা, যুদ্ধজয়ের যশোভাগ সৰ্ব্বপ্রথমে তাহাকেই দিতে হয়। বাংলাভাষাকে পূৰ্ব্বপ্রচলিত অনাবশুক সমাসাড়ম্বরভার হইতে মুক্ত করিয়া, তাহার পদগুলির মধ্যে অংশযোজনার স্বনিয়ম স্থাপন করিয়া বিদ্যাসাগর যে বাংলাগদ্যকে কেবলমাত্র সর্বপ্রকারব্যবহারযোগ্য করিয়াই ক্ষান্ত ছিলেন, তাহা নহে, তিনি তাহাকে শোভন করিবার জন্তও সৰ্ব্বদা সচেষ্ট ছিলেন। গদ্যের পদগুলির মধ্যে একটা ধ্বনিসামঞ্জস্ত স্থাপন করিয়া, তাহার গতির মধ্যে একটি অনতিলক্ষ্য ছন্দঃস্রোত রক্ষা করিয়া, সৌম্য এবং সরল শব্দগুলি নির্বাচন করিয়া বিদ্যাসাগর বাংলাগদ্যকে সৌন্দৰ্য্য ও পরিপূর্ণতা দান করিয়াছেন। গ্রামপাণ্ডিত্য এবং গ্রাম্যবর্বরতা, উভয়ের হস্ত হইতেই উদ্ধার করিয়া তিনি ইহাকে পৃথিবীর ভদ্রসভার উপযোগী আৰ্য্যভাষারূপে গঠিত করিয়া গিয়াছেন। তৎপূৰ্ব্বে বাংলাগদ্যের যে অবস্থা ছিল, তাহা আলোচনা করিয়া দেখিলে এই ভাষাগঠনে বিদ্যাসাগরের শিল্পপ্রতিভা ও স্বষ্টিক্ষমতার প্রচুর পরিচয় পাওয়া যায় । কিন্তু প্রতিভাসম্পন্ন বলিয়া বিদ্যাসাগরের সন্মান নহে । বিশেষত বিদ্যাসাগর যাহার উপর আপন প্রতিভা প্রয়োগ করিয়াছিলেন, তাহ প্রবহমান,—পরিবর্তনশীল। ভাষা নদীস্রোতের মতো–তাহার উপরে কাহারো নাম খুদিয়া রাখা যায় না। মনে হয়, যেন সে চিরকাল এবং সৰ্ব্বত্র স্বভাবতই এইভাৰে প্রবাহিত হইয়া আসিতেছে। বাস্তবিক সে যে কোন কোন নিৰ্বরধারায় গঠিত ও পরিপুষ্ট, তাহা নির্ণয় করিতে