পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগরচরিত 8s অধিকাংশের মন সজীব নয় বলিয়া শাস্ত্রে এবং লোকাচারে আমাদের মনঃপুত্তলীযন্ত্রে দম দিয়া তাহাকে একপ্রকার কৃত্রিম গতি দান করে । কেবল সেই জোরে আমরা বহুকাল ধরিয়া দয়া করি না, দান করি ; ভক্তি করি না, পূজা করি ; চিন্তা করি না, কৰ্ম্ম করি ; বোধ করি না, অথচ সেইজন্তই কোনটা ভালো ও কোনটা মন তাহ অত্যন্ত জোরের সহিত অতিশয় সংক্ষেপে চোখ বুজিয়া ঘোষণা করি। ইহাতে সজীব-দেবতাস্বরূপ পরমার্থ আমাদের মনে জাগ্রত না থাকিলেও তাহার জড়প্রতিমা কোনোমতে আপনার ঠাট বজায় রাখে। এই নিজীবতা ধরা পড়ে বাধা-নিয়মের নিশ্চেষ্ট অনুসরণ দ্বারা । যে সমাজে একজন অবিকল আর একজনের মতো এবং এক কালের সহিত অন্ত কালের বিশেষ প্রভেদ খুজিয়া পাওয়া যায় না, সে সমাজে পরমার্থ সজীব নাই এবং মননক্রিয়া একেবারে বন্ধ হইয়া গেছে, এ কথা নিশ্চয় বলা যাইতে পারে । আমাদের দেশের কবি তাই বলিয়াছেন—“গতানুগতিকে লোকো ন লোকঃ পারমাথিকঃ ” অর্থাৎ লোক গতানুগতিক। লোক যে পারমার্থিক নহে এবং পারমার্থিক লোক গতানুগতিক হইয়া থাকিতে পারেন না, কবি এই নিগুঢ় কথাটি অনুভব করিয়াছেন। বিদ্যাসাগর আর যাহাই হউন, গতানুগতিক ছিলেন না। কেন ছিলেন না ? তাহার প্রধান কারণ, মননজীবনই তাহার মুখ্যজীবন ছিল । অবশু, সকল দেশেই গতানুগতিকের সংখ্যা বেশি। কিন্তু যে দেশে স্বাধীনতার মূৰ্ত্তি ও বিচিত্র কৰ্ম্মের চাঞ্চল্য সৰ্ব্বদা বর্তমান, সেখানে লোকসমাজমন্থনে সেই অমৃত উঠে,—যাহাতে মনকে জীবনদান করে, মননক্রিয়াকে সতেজ করিয়া তোলে । 8